পুঠিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস যেন অনিয়মের অপর নাম

পুঠিয়া প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পুঠিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়াই পরিণত হয়েছে। সাব-রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখক (মোহরীরা) জমি বিক্রেতাদের বিক্রয়কৃত জমির কাগজপত্র যাচাই বাছাই ছাড়াই ক্রেতার নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইচ্ছে মত দলিল সম্পদান করছে। এতে এলাকার জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলার পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া গ্রামের শংকর চন্দ্র ঘোষ সিল্কসিটি নিউজকে জানান, আমার পিতা মৃত্যুর পর ঝলমিলয়া মৌজার দাগ নং-১২৭৪, জমির ধরণ বাঁশ ঝাড়, দাগের .১৯ (উনিশ) শতক এর কাত ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) পান। যার খারিজ কেস নং-১৯৮৩/৯-১/৭৪-৭৫ তারিখ ০৭/০৬/১৯৭৫ সাল। এরপর তিনি ১৯৯৪ সালে তার মেয়ের বিয়ের সময় জমিটি নাটোর সদর উপজেলার কাফুরিয়া পন্নাতপুর গ্রামের আলী আকবর নিকট বিক্রি করেন।

 

আলী আকবর জমি কেনার পর তার স্ত্রী হাবিবা বেগমের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেন। পুঠিয়া সাব-রেজিষ্টার অফিস জমি রেজিষ্ট্রিরী সম্পন্ন হয়। সে সময় দলিল লেখক (মোহরী) জমির কাগজপত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা না করেই ভুলবশত .১৯ (উনিশ) শতক এর কাত ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) স্থলে .১৯ (উনিশ) দলিল সম্পাদান করেন এবং রেজিষ্ট্রি করেন।

 

এরপর শংকর চন্দ্র ঘোষ বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন। দলিলে খারিজ কেস নং-১৯৮৩/৯-১/৭৪-৭৫ তারিখ ০৭/০৬/১৯৭৫ উল্লেখ পূর্বক .১৯ (উনিশ) শতক জমির দলিল সম্পদান করে। খারিজ কেস মূলে তার জমি রয়েছে মাত্র  ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) শতক। গোপনে সাড়ে ১৩ এর স্থলে .১৯ (উনিশ) দলিল সম্পাদান করে নেয়।

 

তিনি বলেন, ওই দলিল লেখক ও ক্রেতার যোগসাজসে হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। উক্ত দলিল সংশোধনের কোন পথ নেই। সেই সুযোগে আলী আকবর আমার ভাইয়ের ছেলে সুকুমল কুমার ঘোষ (সুবল) এর যোগ সাজসে দলিলটি সংশোধন করছে না। আর দলিল সঠিক না হওয়ায় ১৯৯৪ সালে জমি ক্রয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত নাম খারিজ করতে পারেনি আকবর আলী।
আকবর আলী সিল্কসিটি নিউজকে জানান, জমি শংকর চন্দ্র ঘোষের নিকট থেকে কেনার পর বাঁকি সাড়ে ৫ শতক জমি সুনিল চন্দ্র ঘোষ, সুকুমল কুমার ঘোষ (সুবল) এর মায়ের মৃত্যুর পর তার সৎ কাজের জন্য আমার নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করে। কিন্তু রেজিষ্ট্রি করে দেয়নি। সুনিলের ছোট ভাই কৃষ্ণ ঢাকায় চাকুরী করার কারণে টাল বাহানা করে। এর মধ্য সুনিল হার্ট এ্যার্টাক করে মারা যায়।
উপজেলার ঝলমলিয়া গ্রামের পূর্ণ, সঞ্জয়, গোল মোহাম্মদ সহ এলাকাবাসী জানায়, তারা জানি উক্ত জমি শংকর ঘোষ বিক্রি করার পর সুনিল চন্দ্র ঘোষ, সুকুমল কুমার ঘোষের (সুবল) মায়ের মৃত্যুর পর তার সৎ কাজের জন্য সাড়ে ৫ শতক জমি আলী আকবরের  নিকট বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া অবস্থিত পাইকপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং-৩৭৫/১, হোঃ নং-১১৩২, জে.এল নং ১২৭, শংকর চন্দ্র ঘোষ এর নামে ১২৭৪ দাগে বাঁশঝাড় জমির পরিমাণ সাড়ে ১৩ শতক রয়েছে। আর ১৯ শতক জমির দলিল হয়ে থাকলে সেইটি ভূয়া। কিন্তু সে শংকর চন্দ্র ঘোষ এর নামের সাড়ে ১৩ শতক জমিই পাবে।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিষ্ট্রার আলতাব হোসেন জানান, ১৯৯৪ সালে এখানে আমি পোষ্টিং ছিলাম না। তাই বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে উক্ত জমি ভুল করে বা জালিয়াতি করে রেজিষ্ট্রি হলেও সেইটা সংশোধনের কোন নিয়ম নাই। তবে ক্রেতা যদি ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) স্থলে  .১৯ (উনিশ) শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে থাকে। আর যদি হোল্ডিং-এ ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) থাকে তাহলেও ক্রেতা ঐ ১৩.৫ (সাড়ে তেরো) জমিই পাবে .১৯ (উনিশ) শতক পাবে না।
অপর দিকে জানা গেছে, একই উপজেলার দাশমাড়িয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের জমি তাঁর সেবায়েত (ঠাকুর) রামপদ মন্ডল গোপনে তাঁর পুত্রদের নিকট বিক্রি দেখিয়ে দাসমাড়িয়া মৌজার খাতিয়ান -৩১১, হোঃ নং- ৭০৯, ৩১৪ দাগে ৫৫ শতক মন্দিরের জমি যাচাই-বাছাই ছাড়াই  ২০০২ সালে পুঠিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করে।

 

এর বাইরেও দলিল করেত গেলেই নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করা হচ্ছে পুঠিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে। এতে করে নানাভাবে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েও কম মূল্যে জমি রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে এ অফিসে।

স/আর