চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন করা হলেও দীর্ঘদিন থেকে তা বন্ধ

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : লাইট-ফ্যান অকেজো, জেনারেটর থাকতেও চালু হয়নি কখনো

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ জেনারেটর, রোগীদের শয্যায় ব্যবহৃত অধিকাংশ ফ্যান-লাইট অকেজ হয়ে পড়ে আছে। সেই সাথে বন্ধ আছে পরিক্ষা-নিরীক্ষাসহ অপারেশন কার্যক্রম। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব কারণে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে প্রথম কমপ্লেক্স ভবন চালু হয়। শুরু থেকে ৩১ শয্যা সেবা কার্যক্রম থাকলেও তা গত ২০১০ সাল থেকে উন্নত করে ৫০ শয্যা করা হয়। বাড়ানো হয় চিকিৎসকের সংখ্যা ও সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নিকট থেকে ৫ টাকা ও ভর্তি রোগিদের জন্য ১০ টাকা ফি আদায় করছেন।

এদিকে শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, খাতা-কলমে অধিকাংশ চিকিৎসক উপস্থিত থাকলেও জরুরি ও বহির বিভাগে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক উপস্থিত আছেন। পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে অপরিচ্ছন্নতা। জেনারেটর থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালুর পর থেকে কখনো সেটা চালু করা হয়নি। মহিলা-পুরুষ ওয়ার্ড ছাড়াও কমপ্লেক্সের অধিকাংশ লাইট ও ফ্যানগুলো অকেজো হয়ে আছে। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে আল্টা ও ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন করা হলেও দীর্ঘদিন থেকে তা বন্ধ পড়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুকুর ও সাপে কামড়ের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় না। পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে দীর্ঘদিন থেকে খাবার বিশুদ্ধ পানি সংকটও চলছে। কমপ্লেক্স এলাকায় একাধিক টিউবওয়েল থাকলেও তা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ৭ বছর থেকে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত খাবার পানির সংকটে ভুগছেন। তবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে গত দুই বছর আগে কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থানে ফিল্টার সংযোজন করা হয়; যাতে কারিগরি ত্রুটির কারণ দেখিয়ে  এখনো পানি সরবরাহ করা হয়নি।

সেলিম ইবনে টিপু হক নামের একজন রোগির স্বজন বলেন, নিয়ম অনুসারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন আবাসিক চিকিৎসক থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু তিনি এখানে হাজিরা দিয়ে চলে যান শহরে। সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দিনের বেলায় নামমাত্র চিকিৎসা পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর শয্যায় থাকা রোগীদের কোনো চিকিৎসা দেয়া হয় না। এমনকি জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকদের সন্ধান করতে গেলে কতব্যরত সেবিকারা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। বিষয়গুলো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

মতিনা খাতুন নামে একজন রোগী বলেন, ডাক্তাররা হাসপাতালে শুধু নামে থাকেন। ক্লিনিকগুলো ফোন দিলেই তারা এখানে সেবা ফেলে রেখে দৌড় দেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী বা জরুরি রোগীদের কোনো ওষুধপত্র দেয়া হয় না। ডাক্তারগণ একটা ব্যবস্থাপত্র হাতে তুলে দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলেন।

এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি.এম.হিরা বাচ্চু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সংকট ও সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সাথে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিনিয়ত এখানে দুর্ঘটনাজনিত রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন। সেই সাথে জেলার চারঘাট, দুর্গাপুর ও নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার হাজারো রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। তবে এখানে নানা জটিলতার কারণে অধিকাংশ রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। তাদের ছুটে যেতে হয় রামেক হাসপাতালে। এই বিষয় গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মতিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু সমস্যা আছে। আর আমরা বেশীর ভাগ সমস্যার সমাধান করতে কাজ করছি।

জি/আর