পুঠিয়ায় দুর্বৃত্তের আগুনে ঝলসানো ‘মা’ ঢাকায় লাইফ সাপোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে ৪ বছরের শিশু সন্তানের সামনে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে ঝলসানো ‘মা’ ঢাকা মেডিকেল কলেজে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ। গত মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারী ) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে বানেশ্বর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের পেছনে শিশু সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাবার সময় বোরকা পড়া দুর্বৃত্তরা ওই নারীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুনে দগ্ধ ওই নারীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। তবে এ ব্যপারে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ এমনকি ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় এ বিষয়ে কোন মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে এঘটনায় সম্পৃক্ত কয়েকটি আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আগুন দেয়ার কারন জানা যায়নি। ঘটনার পর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে, জেরিনের সহপাঠী নাজমুল হক সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সকাল থেকে আহত আবস্থায় রামেকের বার্ন ছিল। ওয়াস করার ছাড়া তেমন কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। পরে রাজশাহী কলেজের আর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আলহাজ্ব উদ্দিন স্যার এসে দেখে যায় এবং ঢাকা নেয়ার ব্যবস্থা করতে বলে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তাকে ঢাকাতে নেয়ার  উদ্দ্যেশে রওনা হয়। সে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সার্পোট এ আছে।

আগুনে দগ্ধ আহত নারী হলেন, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার মিজানুর রহমানের স্ত্রী জেরিন আক্তার (২৬)। তিনি রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্বামী মিজানুর রহমান বানেশ্বর বাজারে অবস্থিত একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরি করেন সে সুত্রে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বানেশ্বর ভুমি অফিসের পেছনে একটি তিন তলা বাসায় ভাড়া থাকতেন।

মঙ্গলবার সকালে জেরিন আক্তার তার চার বছরের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে আরচার্ড একাডেমি নামক একটি বেসরকারী স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে এঘটনা ঘটে।

চার বছরের শিশু সন্তান মাশফিয়া রহমানের কথা জেরিনের সহপাঠীদের মধ্যমে জানা যায়, “সকালে স্কুল যাওয়ার সময় একজন বোরখা পরা কেউ আম্মুর মুখে পানির মত কিছু দিয়ে দেয়। তারপর লাঠি দিয়ে মুখে আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় রেজিন চিৎকার দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। ”

প্রত্যক্ষদর্শী বানেশ্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক জানান, আনুমানি সাড়ে ৭ টার দিকে এক নারীর চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখেন একজন বোরকা পরিহিত নারী রাস্তায় গড়াগড়ি করে চিৎকার করছে তার শরিরে দাও দাও করে আগুন জলছে। এসময় তার পাশে ৪/৫ বছরের একটি শিশু দাড়িয়ে ভয়ে কান্না করছে। তাৎক্ষনাত আবদুর রাজ্জাক স্থানীয় আরো কয়েকজন প্রতিবেশিকে ডেকে নিয়ে পানি ঢেলে নারীর শরীরের আগুন নিয়ন্ত্রনে এনে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, জীবন্ত মানুষের গায়ে আগুন লাগার এমন দৃশ্য আমি আগে কোন দিন দেখিনি। এমনকি এই নারীকেও এর আগে কোন দিন দেখিনি। ঘটনাস্থলে দুইটি বোতল পাওয়া গেছে যার একটি বোতলে অর্ধেক পেট্রোল ছিলো, একটি হাতুর এবং একটি কাঠের চলা ও একটি গ্যাস লাইট পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে, বোতলে করে পেট্রোল এনে ওই নারীর শরিরে ডেলে কাঠের চলা দিয়ে তার শরীরে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রাজ্জাক আরো বলেন, তাৎক্ষনাত ওই নারীকে বার বার জিজ্ঞাসা করেও কারো নাম যানা যায়নি। তিনি তখন কথা বলতে পারছিলেন না এমনকি শিশুটিও কথা বলতে পারছিলেন না।

স/অ