মইদুল ইসলাম মধু:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় রোগীকে। পরে প্রতিবেদনে তাদের ডেঙ্গু রোগের নমুনা মিলে। ডেঙ্গু সনাক্তকরণের কোন প্রক্রিয়া নেই পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে করে রোগীদের মাঝে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে অন্যদিকে বাইরে থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই ভুক্তভোগীদের।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগের আবির্ভাব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি মশা নিধন অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযোগ উঠেছে খোদ উপজেলা পরিষদ ও পৌরসদরে বড় বড় ময়লার স্তুপ থাকলেও দায়সাড়া ভাবে নামমাত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করা হচ্ছে এবং ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানোর ফটোশেসন করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা গেলেও এ ধরনের তথ্য হাসপাতালে নেই বলে দাবী করছেন কর্তৃপক্ষ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হলেন, উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৪) এবং উপজেলা সদর ইউনিয়নের কান্দ্রা গুচ্ছগ্রাম এলাকার মিঠুন আলীর স্ত্রী আসমা বেগম (২২)।
তাদের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ৫ দিন এবং আসমা বেগম তিন দিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে ছিলেন। গত (০৯ আগষ্ট) শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করতে বললে তারা উপজেলা কমপ্লেক্সে থেকে অদুরে অবস্থিত একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করে উপজেলা কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রতিবেদন দেখান। এ সময় চিকিৎসক তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তারা বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানিয়েছে পরিবার।
তবে হাসপাতালে কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসেনি দাবী করে হাসপাতালের টিএইসও নাজমা আক্তার বলেন, এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করার কোন যন্ত্র নেই। আমার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে এ ধরনেরও কোন তথ্য নেই। তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আপনাকে এসব তথ্য কে দিয়েছে?
উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগের আবির্ভাব দেখেই উপজেলা প্রশাসন ডেঙ্গু রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে মাঠে নামেন। সেই সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফগার মেশিন দিয়ে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড অসুধ প্রয়োগ করেছেন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসুচির অংশ হিসেবে গত ৬ আগষ্ট উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় একযোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিন উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ কর্মসুচি পালিত হয়। সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ অভিযানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র রবিউল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সহ বিভিন্ন দপতরের প্রধান এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষার্থীরা। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভিযানের নামে সেদিন দায়সাড়া ভাবে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে ছবি তোলা হয়েছে।
পুঠিয়া পৌর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, পৌরসভা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ময়লার ভাগাড় আছে সেগুলো বাদ দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা দুএকটি গাছের পাতা পরিস্কার করে সেদিন ছবি তোলা হয়েছে।
আবদুল মান্নান নামক এক বাসিন্দা বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরেই বিশাল বিশাল কয়েকটি ময়লার স্তুপ রয়েছে কই সেগুলোতো কেও পরিস্কার করলো না। দিনের পর দিন ময়লার স্তুপ পড়ে সেখান থেকে বিভিন্ন রোগ বালাই ছড়াচ্ছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও সেগুলো পরিস্কার করেনা।
একই অভিমত জানা গেছে অন্যন্য ইউনিয়ন এলাকার জনসাধারনের মুখেও। তারা বলছেন ময়লার স্তুপ আগের মতই আছে শুধু নির্দিষ্ট স্থানে ছবি তুলতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান দেখানো হয়েছে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, শুনেছি দু’জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। আমি এ ব্যপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। দেশে ডেঙ্গু রোগের আবির্ভাব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিপূর্বে নিয়েছি। এটা অব্যহত থাকবে বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন