পুঠিয়ায় ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, প্রধান ও সহকারী শিক্ষককে গণধোলাই

পুঠিয়া প্রতিনিধি: 

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের উদ্বোধনী ফলকে মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখার ইস্যু নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর ছেলে স্কুল শিক্ষক মাজেদুর রহমানকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি অংশ। একই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকেও মারপিট করা হয়েছে।

শিক্ষক মাজেদুরের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ আনা হয়েছে পুঠিয়া থানায়। এদিকে মিমাংশায় গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী।

রাজশাহীর পুঠিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে (১৫ অক্টোবর) এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক মাজেদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। মাজেদুর রহমান উপজেলার রঘুরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংক বিষয়ের শিক্ষক।

আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে মামলা করেন। এই মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষককে চালানা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর বিকেলে স্কুল ছুটির পর বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঘরোয়া ভাবে বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা চালানোর সময় শিক্ষককে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর বরাত দিয়ে ওসি রেজাউল ইসলাম জানায়, স্কুল ছুটির পর তাকে আলাদাভাবে অংক দেখিয়ে দেয়ার কথা বলে শ্রেণি কক্ষে ডেকে নেই। পরে স্কুলের জানালা দরজা বন্ধ করে তাকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নাম্বার দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। ঘটনার পর ভয়ে স্কুলছাত্রী স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয় ওই ছাত্রী। পরে পরিবারের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়টি খুলে বলেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি মিমাংশার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে স্কুলছাত্রীর বাবাকে নিয়ে ওই শিক্ষকের মামা শফিকের বাড়িতে মিমাংশার জন্য বসা হলে এলাকাবাসী টের পেয়ে তাতে বাঁধা দেন। পরে প্রধান শিক্ষকসহ অভিযুক্ত শিক্ষক মাজেদুর রহমানকে গণধোলাই দিয়ে পুুলিশে খবর দেন। পুুুলিশ গিয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও মাজেদুর রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

ওসি রেজাউল বলেন, স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগের মামলায় শিক্ষক মাজেদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক অবুল কালাম আজাদ জানান, শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর নামফলক নিয়ে একটা আপত্তি উঠেছিলো। আমাকে এই নাম ফলক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানও আপত্তি জানান। এটি সরকারি কোন অর্থে হয়নি এবং মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর নাম কেন ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও আমি তাকে জানাই। এবং বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথেও যোগাযোগ করেছি। তিনি আরও বলেন, ছাত্রী স্ত্রীলতাহানীর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। স্কুলে অনেকেই একসাথে টিউশানি করে। স্কুল ছুটি আছে। এ অবস্থায় আমাকে হুসনে আরা বেগম নামে স্কুলের এক শিক্ষক শ্লীলতাহানীর বিষয়টি আমাকে অবগত করেন। মঙ্গলবার রাতে তাদের বাসায় বিষয়টি সমাধানের জন্য ছেলে ও মেয়ে পক্ষতে ডাকে। আমাকেও ডাকেন। সেখানে আলোচনা শেষে সবাই যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শুনি আমার বাড়িতে হামলা হচ্ছে। আমি সেখোনে যেতেই শুনতে পাই ওরা আমাকে মারার জন্য খুঁজছে। আমি বাড়িতে না ঢুকে পাশের একটি জমিতে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ওরা ১০/১২ জন সেখানে গিয়ে লাঠি দিয়ে মাথা, কোমর ও পায়ে মারপিট করে।

মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলি দাবি করেছেন, শহীদ মিনারে আমার নাম থাকার ইস্যু নিয়েই ওরা মাজেদুরকে মারপিট করেছে। ও যাতে এ নিয়ে না এগোই এ জন্যই ওর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা এটা করছে। তিনি দাবি করেন এক সাথে অনেকজন প্রাইভেট পড়ে সেখানে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করছে। এটা মিথ্যা।

স/আ