পুঠিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণীর’ প্রভাব: আমের জন্য আশীর্বাদ, ধানের জন্য অভিশাপ

মইদুল ইসলাম মধু:
শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় ফণী রাজশাহীর উপর দিয়ে না গেলেও এর প্রভাবে গত শুক্রবার থেকেই হালকা থেকে মাঝাড়ি আকারে ঝোড় হাওয়া সেই সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়েছে। তবে গত ক’দিনের তিব্র তাপদাহ শেষে বৃষ্টি হওয়ায় ফণীকে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফসল আমের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছে কৃষকরা। তবে আমের জন্য আর্শিবাদ হলেও চলতি বোর মৌসুমের আধাঁপাকা ধানের জন্য ছিলো “ফণী” অভিশাপ।

বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ায় পুঠিয়া উপজেলার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আধাঁ পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে কৃষকরা বোরর শেষ সময়ে এসে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। তবে কৃষি অফিস এটাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলছেন না। তারা এ ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝোড় হাওয়ার পাশাপাশি তীব্র বৃষ্টি পড়েছে। গত ক’দিনের তীব্র তাপদাহ শেষে প্রতিকুল আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের ব্যাপক উপকার হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সহজেই আম বৃদ্ধি পাবে এবং আম ঝরে পড়া রোধ হয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলার ধনঞ্জয়পাড়া গ্রামের আম পরিচর্যাকারী মাসুদ রানা বলেন, ঘুর্ণিঝড় ফণী আসার খবর আমরা যেভাবে পেয়েছি। তাতে বাড়ি ঘর, ফসল, সবকিছু নিয়ে খুব ভয়ে ছিলাম সবচেয়ে বেশি ভয়ে ছিলাম আম নিয়ে। তবে আল্লাহর রহমতে ঝড় বেশি না হয়ে বৃষ্টি হওয়ায় আমের অনেক উপকার হয়েছে। আমগুলো এখন আর ঝোরে পড়বে না এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, আতঙ্কের ঘর্ণিঝড় ফণী আমাদের জন্য আর্শিবাদ হয়েই এসেছে।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন চলতি বোরো মৌসুমের ধান চাষীরা। তারা বলছেন, আমের জন্য ফণী আশীর্বাদ হলেও ধানের জন্য ফণী অভিশাপ। ফণীর প্রভাবে আধাঁপাকা ধানগুলো সব মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

জিউপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব জিউপাড়া গ্রামের ধানচাষী আবদুল মতিন জানান, পড়ে যাওয়া ধানগুলো কাটতে বারতি শ্রমিক লাগবে এছাড়াও মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ধানের ফলনও কম হবে।

একই গ্রামের অন্য আরেক ধানচাষী জানান, গত শনিবারই তারা ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার রাতের আকস্মিক ঝড়ে সব আধাঁপাকা ধান মাটিতে আছড়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আধাঁপাকা বোরো ধান পড়ে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাও হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, বাতাসে যে ধানগুলো হেলে পড়ে ক্ষতির আশঙ্কা করছে সেগুলো আমরা ক্ষতির মধ্যে ধরছি না। আবহাওয়া ঠিক হলেই এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।

তিনি বলেন, হেলে পড়া জমিতে পানি জমে থাকলে সে পানি বের করে দিতে হবে এবং রোদ হলে যে ধানগুলো ৮০ শতাংশ পেঁকে গেছে সেগুলো কেটে নিতে হবে। এর জন্য তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান জানান, কৃষকদের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানানো হলে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

স/অ