পুঠিয়ায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে মাজারের কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী (র.)-এর মাজারে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তোলা হয়েছে। স্থানীয় সাবেক এমপি দারা’র চাচাতো ভাইকে অভিযুক্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ডিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার বিড়াদহ গ্রামের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়।

অভিযুক্ত শেখ মুক্তাদির শরিফ মাজারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি পদেও রয়েছেন। তার ভাই দারা এমপি হওয়ার পর তাকে এ পদ দেয়া হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ মুক্তাদির শরিফ।

বর্তমান মাজার পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছে, পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান গত ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ওয়াকফ এস্টেটের কাছে মাজার পরিচালনা পরিষদ পরিবর্তনের জন্য সুপারিশপত্র পাঠান। তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর ওয়াকফ প্রশাসনের সহকারী প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসাইন আগের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটির নাম অনুমোদন দিয়েছেন। নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব করতে গিয়ে আগের কমিটির কোটি কোটি টাকার কোনো হদিস পাচ্ছে না। এই টাকা লুটপাটের ঘটনা নিয়ে তারা ইতোমধ্যে ওয়াকফ এস্টেটসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জানা গেছে, ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসনের অধীনে মাজারটি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দিয়ে পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছর ধরে শেখ মুক্তাদির শরীফ মাজারটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মাজারটি ১.১৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। নিয়মানুসারে মাজার পরিচালনার জন্য দশ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করতে হয়। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এতদিন মাজারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এমপি দারার চাচাতো ভাই শেখ মুক্তাদির শরিফ। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, মাজারের ১০ বিঘা জমি থেকে তিন বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মার্কেটের দোকান ঘর থেকে দুই লাখ টাকা, প্রতি শুক্রবার মাজার শরিফের ভেতরে বিভিন্ন দান বাবদ ২৭ লাখ টাকাসহ সড়ক (বাহিরের দানবাক্স) থেকে প্রতি সপ্তাহে ৭০ হাজার টাকা উঠে। এই হিসাব অনুযায়ী, তিন বছরে ১ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। মাজারের কোষাধ্যক্ষ রবিউল হাসান জুয়েলের কাছে টাকার হিসাব চাইলে তিনি আত্মগোপন করেন।

স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ্য আছে, বর্তমান কমিটির চার সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম, মো. মাসুদ রানা, মো. আশরাফ আলী ও মো. আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে গত ১৫ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে এবং টাকা লুটপাটের কারনে ইতোমধ্যে ওয়াকফ এস্টেটসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে এই বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মাজারের পবিত্রতা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম জানান, মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে টাকা পয়সাসহ সব কিছু সাধারন সম্পাদক দেখেন। ফলে এলাকাবাসী সাবেক সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করে অভিযোগ তুলেছেন।

এ ব্যাপারে মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মুক্তাদির শরিফের মোবাইলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মাজারের সব রকম হিসাব অডিট করা হয়েছে। কমিটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি, ২০২১ সাল পর্যন্ত এর মেয়াদ আছে। মাজারটি তিনি একা পরিচালনা করতেন না। অর্থ লুটপাটের বিষয়গুলো ঠিক নয় বলেও দাবী করেন তিনি।

 

স/শা