পুঠিয়ার সেই আ’লীগ নেতা ফজলুরের বিরুদ্ধে গণশুনানিতে বিস্তর অভিযোগ

পুঠিয়া প্রতিনিধি:
পুঠিয়া উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে গৃহহীনদের তালিকা তৈরির সময় অবৈধভাবে প্রতিটি সুবিধাভোগীর কাছে ১০/১৫ হাজার টাকা উত্তোলনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে জিউপাড়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়াধীন “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের” সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে উন্মুক্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আবদুল কাদেরের কাছে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের অভিযোগ কারীদের কথা শুনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

এ ব্যপারে তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গণসাক্ষর দিয়ে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের ব্যপারে তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জরুরি বৈঠক করা হয়। বৈঠকে অবৈধভাবে আদায়কৃত অর্থ দ্রুত ফেরত দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয় এবং সুবিধাভোগীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে প্রকল্পের আওতায় থাকা তিনটি ইউনিয়নে গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

উপজেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে বেলপুকুর ইউনিয়নে ও বিকেলে জিউপাড়া ইউনিয়নে পৃথকভাবে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুটি গণশুনানি অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের। বেলপুকুর ইউনিয়নে সুবিধাভোগীদের কাছে থেকে আদায় করা টাকা তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করে সুবিধাভোগীরা। তবে জিউপাড়া ইউনিয়নে প্রকল্পের নামে টাকা উত্তোলনের ব্যপারে কেও মুখ না খুললেও টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রকৃত গৃহহীনদের বাদ দিয়ে যারা টাকা দিয়েছে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে জিউপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে।

ইউনিয়নের বারপাখিয়া গ্রামের দরিদ্র ব্যক্তি সিরাজ মিয়া বলেন, আমার কাছে ফজলু মেম্বার তার মনোনিত ব্যক্তি ভুটুর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে টাকা দিলে আমাকে ঘর দেয়া হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

গণশুনানিতে উপস্থিত অনেকেই একই কথা বলেছেন। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে বলেন, প্রকৃত গৃহহীন হয়েও সরকারের সুবিধা পাচ্ছি না অথচ যাদের ফ্ল্যাট বাড়ি তারা সরকারি ঘর পাচ্ছে বলে গণশুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে এই অপকর্মকারীরা। অসহায় দড়িদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ দেয়া সরকারের প্রকল্পগুলোকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা ছাড়াও সকল বিষয়ে স্বজনপ্রীতি আর চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন গণশুনানিতে উপস্থিত আ.লীগের স্থানীয় অনেক নেতাই।

তবে অভিযোগগুলোর প্রতিকার করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং অভিযোগ কারীদের ইউএনওর কাছে গিয়ে লিখিত আকারে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য বলেছেন।

এ ব্যপারে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফজলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ। আমাকে রাজনৈতিকভাবে খাটো করতে ষড়যন্ত্র করে অভিযোগগুলো করা হয়েছে।

গণশুনানির ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বেলপুকুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী অনেকে তাদের টাকা ফেরত পেয়েছে বলে স্বীকার করেছে এবং অনেকে বলেছে তারা কেউ এ ব্যপারে কাউকে টাকা দেয়নি। তবে জিউপাড়া ইউনিয়নে তালিকা তৈরির সময় কিছুটা অনিয়ম হয়েছে সেটার ব্যপারে আমরা সরেজমিনে তদন্ত করবো। প্রকৃত গৃহহীন যারা গণশুনানিতে অভিযোগ করেছেন তাদেরও আমরা তালিকায় নিয়ে আসার ব্যপারে জোর চেষ্টা করবো।
স/শা