পুঠিয়ার রাজপ্রাসাদ যেন ভুতের বাড়ি, মাদকের অাড্ডা খানা

তারেক মাহমুদ:

ইতিহাসের কী উপাদান লুকিয়ে আছে, তা আমরা অনেকেই জানি না। আর এ না জানার কারণে আমাদের আড়ালে রয়ে যায় অমূল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আর অনেক সময় তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে ধংস্বপ্রপ্ত হয়ে বিলুপ্তও হয়ে যায়।

 

  • প্রত্মতাত্ত্বিক সম্পদকে সব দেশেই যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। তা যথাযথভাবে সঠিক সময়ে সংরক্ষণও করা হয়। প্র্ত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলোকে এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যা হয়ে ওঠে দর্শনীয়। তা দেখার জন্য দেশ বিদেশের থেকে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন পরিবার-পরিজন বন্ধুবান্ধব মিলে।


আর অনেকেই সেখান থেকে তুলে আনেন অনেক হারিয়ে যাওয়া নিদর্শনের হারিয়া যাওয়া অনেক তথ্য ও ইতিহাস। আর কিছু না হোক, অনন্ত চোখের দেখায় তো পরিতৃপ্ত হওয়া যায়। সেখান খেকে পাওয়া যায় গৌরবময় অনেক অনুভূতি। আর পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশেও রয়েছে ঐত্যিহাসিক অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। কিন্তু সংরক্ষণ ও পরিচর্য়ার অভাবে হারিয়ে বিলুপ্তির পথে অনেক মূল্যবান ঐত্যিহাসিক নিদর্শন এখনও বিনষ্ট হচ্ছে।

 

ঠিক এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় অবস্থিত পাঁচ আনি ও চারআনি রাজার বাড়িকে ঘিরে। কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসা পাঁচআনি রাজার বাড়িটি কোনোমতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে নয়-ছয় করে এখানে সংস্কারও হচ্ছে। কিন্তু পাশেই চারআনি রাজার বাড়িটি নিয়ে যেন সবাই উদাসিন।

 

কেউ নজরে আনছে না বাড়িটিকে ঘিরে। ফলে এই বাড়িটি দিনে দিনে যেন এক ধংস্তুপে পরিণত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়িটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের আড্ডাখানা। এমনটি চলতে থাকলে আমরা হারিয়ে ফেলবো আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অমূল্য সম্পদ।


ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বাঁম দিকে ত্রিমোহিনী জামে মসজিদের পাশ দিয়ে কিছুটা পথ যাওয়ার পর রাজবাড়ী চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। ভবনগুলোর আকার আর আকৃতি দেখলে কেমন যেন রোমাঞ্চকর ও ঐত্যিহাসিক নিদর্শনের শিহরণ জেগে আছে পুরার্কীতির অধিকাংশই আজ ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তির পথে। শত শত বছর আগের ভবনগুলো মলিন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। যেখানে রাজা নেই। নেই রাজত্ব নেই কোন প্রাণের উত্তাপ।

  • জায়গায় জায়গায় ফাঁটল ধরেছে, ভেঙে গেছে পাঁজর । খুলে খুলে যাচ্ছে ইট-সুরকি। হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতোন লোহার তীর লোহার সাজানো দড়জাগুলো শুধু দুইটি লোহার দরজা টিকে আছে বাঁকি হারিয়ে গেছে  চুরি হয়ে গেছে আর সব ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে
    দিনের বেলায় কেমন যেন একটা ভুতবাড়ির মত পরিবেশ। গা শিহরণে ছমছম করে। আর রাতের বেলার অনুভূতি কেমন হবে, সেটা তো ভাবতেই ভয় লাগে।


কিন্তু এই ভবনের চারপাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরার্কীতির সব নিদর্শন। এতসব মূল্যবান স্থাপনা একই চত্বরে একই সাথে হয়তোবা আর কোথাও নেই। যদিও  বর্তমানে ১৮ সংস্থাপনার মাঝে সংরক্ষণ করা হচ্ছে রাজবাড়িসহ ১৪টি স্থাপনা। বাঁকি নির্দশনগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

 

  • পুঠিয়ার চারআনি রাজবাড়ীর কথা পাঁচ আনি রাজপ্রাসাদ হতে ১০০ মিটার পশ্চিমে দিকে শ্যামসাগর নামক দীঘির দক্ষিণে পড়ে আছে চার আনি রাজপ্রাসাদটি। জমিদার কার্য সম্পাদনের লক্ষে রাজপ্রাসাদে অঙ্গনে বিভিন্ন অফিসে ভবনে,রাজকর্মচারিদের আবাসস্থল ও ঘোড়াশালা ইত্যাদির ব্যাবস্থা ছিল এখানে।

 

কিন্তু বর্তমানে শুধু প্রধান তোরণে এবং কাচারি অঙ্গনে অর্ধভগ্ন অবস্থায় থাকলেও অন্যান্য ইমারত ধ্বংসপ্রাপ্ত । ১৯৭১ খিস্টাব্দে এ ইমারতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এ রাজবাড়ীর প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে বিশাল ও সুউচ্চ তোরাণটি অবস্থিত। চারআনি রাজবাড়ির প্রধান প্রবেশের তোরাণ,কাছারি বাড়ি, খাজাঞিখানা ও অন্যান্য কক্ষ সমসূহের অভ্যন্তর ও বার্হিভাগ সম্পূর্ণটাই পলোস্তরার আস্তরণে আচ্ছাদিত।

 

  • সারেজমিন করে আর স্থানীয় সূত্রে সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, অতীতে সুন্দরভাবে সাজানো ছিল বর্তমানে তা এখন নেষাগ্রস্থদের অভায়আশ্র্যামে দাড়িয়েছে বেড়াতে এসে দর্শনার্থীদের কেউ কেউ ছিনতাই সহ জিম্মি করে মোবাইল টাকা পায়সা এবং মেয়েদের সোনার গহনা কেঁড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাই ও জিম্মি করার সময় বিভিন্নভাবে ভয়র্ভীতি দেখানো হয়।

 

যেন  থানায় বা কাউকে না জানায়। এসব ভয়ভীতিতে আর প্রতারণায় কেউ কাউকে বলতে সাহস পান না । বললেও কোন সুফল না পাওয়ায় এভাবেই চলছে।

 

গ্রামবাংলা থিয়েটারের কেন্দ্রীয় সহ- সভাপতি কাজী সাইদ হোসেন দুলাল সিল্কসিটিনিউজকে জানান, ১৯৫৭ সালে কমর বেগম রায় জর্জএ নারেশ নারায়ন রায় একটি ডিগ্রি পায়। কারণ মুসলিমলীগ সরকার ক্ষমতায় ছিলো তোহাসিরা তখন ম্যাজিস্টেড ছিলো। ওরাই এই মেয়েটার পক্ষে একটা সঠিক রায় দিয়ে গেছে,তারা রাজার বৌ হিসাবে তাকে সম্পিত্তি দিয়ে গেছে।

 

  • ঐ খানে এক একর মত জমি সকারের নামে রাখলো আর ঐ সম্পত্তিটাই এই বিল্ডিং এর । আর এই কারণে এখানে আরক্লোজি দেখাশনা করেনি। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আসার পর তিনি বলেছিলেন, এবার এই রাজবাড়িটি সংস্কার করা হবে। এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব রাখবে, তবে এই বিল্ডিংএর উপরে আর ছাদ দেওয়া হবে না। এটা যে অবস্থায় আছে এটাই যেন, আরো ১০০ বছর বেঁচে থাকে এটা এই ভাবেই থাকবে।

 

তিনি আরো বলেছিলেন, এখানে অতীতে অনেক লোহার দরজা ছিলো কিন্তু বর্তমানে দুটি রয়েছে বাঁকি গুলো চোরের দখলে। তবে এখানকার কিছু জিনিসপত্র তোহসিল অফিসে রয়ে গেছে। এখানে সংস্কার করা হলে তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো আমরা।
আগামী মার্চ মাসে জাদুঘর করার কথা আছে জাদুঘর হলেই এই জিনিসপত্র সেখানে রাখা উচিত। স্কুল- কলেজে অনেকের বাসায় অনেক জিনিসপত্র রয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। পুঠিয়া অনেক মূর্তি এবং মূল্যবান জিনিসপত্র দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। সেগুলো জাদুঘর হলে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা আরক্লোজি কে বলেছি।

 

  • সেখানকার ছিতাই এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা একটা অরক্ষিত জায়গা যে পরিমাণ জনবল থাকা দরকার তার মাঝে ১৮ টি স্থাপনায় কমপেক্ষ ৩৬ জনকে থাকতে হবে। আর সেখানে আছে মাত্র ৯ জন লোক। এ কারণেই এ স্থানটি হয়তো অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।

 

আসাদুজ্জামান নূর আরো বলেন, দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা দরকার। এখানে পর্যটকদের বিশ্রামের কোন জায়গা নেই। এটা খুবই জরুরি। দেশীয় পর্যটকরা এখানে পিকনিক বা অনুষ্ঠান করতে পারে না। তারা এখানে দেখে গিয়ে নাটোর বা রাজশাহীতে অবস্থান করে। আর এভাবেই এখানে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
স/আর