পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছে ৪ হাজার


সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
গত সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই নানা গুজবে টালমাটাল ছিল পুঁজিবাজার। বিদায়ী ওই মাসেই নতুন করে প্রায় চার হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারী বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে এসেছে। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সিডিবিএলের সূত্র মতে, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬১টি। সেখান থেকে এক মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব ৩ হাজার ৮৯৬টি বেড়ে ১ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৮৫৭টি।

তিন প্রকার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেশি বিনিয়োগকারী এসেছে ৩ হাজার ৬৭৬জন বিওধারী। বিদেশি বিওধারী বিনিয়োগকারী এসেছে ৪০ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিও বেড়েছে ১৮০টি।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ১ অক্টোবর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিওর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯টি। ঠিক তার এক মাস আগে অর্থাৎ ৩১ আগস্ট বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩টি। অর্থাৎ দেশি বিনিয়োগকারীর বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৬টি।

বিদেশি বিনিয়োগাকারীদের বিও সংখ্যা ৩১ আগস্টে ছিল ৫৫ হাজার ৪৬১টি। সেখান থেকে ৪০টি বিও বেড়ে গত ১ অক্টোবর দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৫০১টি। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক বিও হিসাব বেড়েছে ১৮০টি। অর্থাৎ ৩১ আগস্ট বিও হিসাব ছিল ১৬ হাজার ৪৪৭টিটিতে। সেখান থেকে ১ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫২৭টিতে।

নতুন বিও হিসাব বাড়লেও কমেছে শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট। ৩১ আগস্ট শেয়ার রয়েছে এমন বিওর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৭৪টি। সেখান থেকে ৮০টি কমে ১ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ১৯৪টি।

পুঁজিবাজার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছেন, এই মুহূর্তে বাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। কারণ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে। তবে অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা ও আসছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা এখন ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছে। কেউ কেউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আবার কেউ কেউ বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নিচ্ছেন। এ কারণে পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থান করছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখন উত্তম সময়। এখন যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে তারা লাভবান হবে।

তিনি বলেন, একটি শ্রেণি বাজারে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে গুজব সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়। তারা দেশি আন্তর্জাতিক ইস্যুকে সামনে এনে বাজারে গুজব ছড়ায়। আর বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে শেয়ার কেনার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এরপর তারা কম দামে শেয়ার কিনে লাভবান হচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারে শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন কেনা-আর যখন বেশি দাম থাকে তখন বিক্রি করা।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে দেশের সব কয়টি বিভাগে রোড শো করেছি। এখন বিদেশেও রোড শো করছি। বাংলাদেশ এবং দেশের পুঁজিবাজারকে ব্র্যান্ডিং করছি। বিদেশিরা এখন বাংলাদেশের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছর থেকেই বিনিয়োগ আসতে শুরু করবে।

একটি শ্রেণি বাজারে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে গুজব সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়। তারা দেশি আন্তর্জাতিক ইস্যুকে সামনে এনে বাজারে গুজব ছড়ায়। আর বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে শেয়ার কেনার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এরপর তারা কম দামে শেয়ার কিনে লাভবান হচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারে শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন কেনা-আর যখন বেশি দাম থাকে তখন বিক্রি করা

একটি শীর্ষ ব্রোকার হাউজের কর্মকর্তা সুফিয়ান সাইয়েদ বলেন, সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি ভালো না। তবে বিমা খাতের শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা দিচ্ছে। এ কারণে নতুন করে কিছু বিও বেড়েছে।

মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা (এমডি) আশিকুর রহমান  বলেন, তিন কারণে বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ছে। প্রথমত হচ্ছে—বাজারে এখন শেয়ারের দাম কম এই সুযোগে, যারা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা করছেন এখন তারা বিও খুলে শেয়ার কিনছেন।

দ্বিতীয়ত বেশ কিছু কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসছে, তারা রোড শো করছে। পাশাপাশি ফিক্সডপ্রাইস পদ্ধতিতেও বাজারে আসছে। কোম্পানিগুলোর আইপিওতে আবেদনের জন্য এখন বিও খুলছে।

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ইস্যুতে দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারও চলছে নেতিবাচক ধারায়। এই অবস্থায় ভয় ও আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা এখন বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। কম দামে থাকা ভালো শেয়ারগুলো কিনছেন।

তৃতীয় কারণ হচ্ছে— জুলাই মাস থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। ব্যবসা টিকে রাখতে ব্রোকার হাউজের কর্মকর্তারা নিজেরে কাছের মানুষকে পুঁজিবাজারে আনছেন।পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের নানা প্রণোদনার কথা জানিয়ে বিও খোলাচ্ছেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ইস্যুতে দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারও চলছে নেতিবাচক ধারায়। এই অবস্থায় ভয় ও আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা এখন বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। কম দামে থাকা ভালো শেয়ারগুলো কিনছেন। এ কারণে বিও বাড়ছে।