পীরগঞ্জের ঘটনায় শিবিরকর্মীসহ আরও ২ জন গ্রেপ্তার, রিমান্ডে ১৩

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শিবিরকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ওমর ফারুক নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে আজ সোমবার বিকেলে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, ‘শিবির ক্যাডার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ঘটনার দিন প্রায় ৩০টি মোটর সাইকেল নিয়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা জেলেপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস ঘটনা ঘটায়। তাই আবদুল্লাহ আল মামুন ও ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।’

এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মামলায় নতুন করে ১৩ আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকেলে পীরগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী খান এ আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে পুলিশ সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধক শহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, ‘নতুন করে ১৩ আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে ৩৭ আসামিকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রোববার রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে যারা রিমান্ডে ছিলেন তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এবং আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য আবারও নতুন করে ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে এর আগে রিমান্ডে থাকা ৩৭ জন আসামিরা জানিয়েছে।’

গত ১৭ অক্টোবর রাতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জে রামনাথপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ১৫টি পরিবারের বাড়িঘর ও গবাদি পশুসহ সবকিছু আগুনে পুড়ে যায়। প্রায় ৫০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা-পয়সা লুটপাট করা হয়।

এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার এসআই ইসমাইল হোসেন বাদি হয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় একটি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পীরগঞ্জ থানার এসআই সাদ্দাম হোসেন বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পৃথক দুটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ৩৭ জনকে ২১ অক্টোবর রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

এ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অন্যতম হোতা র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দর্শন বিভাগ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সৈকত মন্ডল ও তার সহযোগী বটেরহাট মসজিদের ঈমাম রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। র‌্যাব-১৩ এর ডিএডি আবদুল আজিজ বাদি হয়ে পীরগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন।

পীরগঞ্জ থানার এসআই সুদীপ্ত শাহীনকে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়েরকৃত পৃথক চারটি মামলায় এ পর্যন্ত ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া ও সহিংসতার ঘটনা উসকে দেওয়ার অন্যতম হোতা পরিতোষ সরকার, উজ্জ্বল হোসেন, সৈকত মন্ডল এবং মসজিদের ঈমাম রবিউল ইসলামসহ অনেকেই রয়েছেন। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন।-আমাদের সময়