পিতৃহীন অসহায় দগ্ধ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন আ’লীগ নেতা সান্টু

শফিকুল ইসলাম:

পিতাহারা অসহায় শিশু মহিমা খাতুন (৭) চুলার ওপরে থাকা গরম তরকারি শরীরে পড়ে দগ্ধ হয়ে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পুড়ে অসহায় শিশুর পিছনের অংশে মারাত্মকভাবে ঝলসে যায়। হাসপাতালের বেড়ে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন ছোট্ট মহিমা। খবর পেয়ে রাজশাহী শহর থেকে  বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু। গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ঝলসে যাওয়া শিশুর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন জনপ্রিয় এই নেতা। এসময় তিনি অসহায় শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন।

জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বড় বিহানালী ইউনিয়নের মুরারীপাড়া গ্রামের এই পিতৃহীন শিশুটির শরীরের পেছনের অংশে গরম তরকারি পড়ে ঝলসে গেলে ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলো না অসহায় শিশুটির পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে আওয়ামী লীগ নেতা জাকিরুল ইসলাম সান্টু দ্রুত বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে পিতৃহীন অসহায় শিশু মহিমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। উন্নত চিকিৎসার যাবতীয় খরচ তিনি নিজের কাধে তুলে নেন।

ঝলসে যাওয়া শিশুটির পারিবারিক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে মহিমা কয়েকজন খেলার সাথীর সঙ্গে বাড়ির উঠানে খেলছিল। পাশে খোলা স্থানে তার মা রান্না করছিলেন। এক পর্যায়ে শিশুটি অসাবধানতাবশত তরকারির হাঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় গরম তরকারি শিশুর কোমরের নিচের অংশে পড়ে। এতে শিশু মহিমার পেছনের অংশ মারাত্মকভাবে ঝলসে যায়। প্রাথমিকভাবে তাকে বাড়িতে রেখেই বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো। তবে অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং ঝলসে যাওয়া স্থানে গভীর ক্ষত ও দগদগে ঘা-এর সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিদারুণ ব্যথায়  বাড়িতে কান্নাকাটি করছিলো ছোট্ট মহিমা। রবিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মী গিয়ে শিশুটিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে ও অপচিকিৎসা দিতে দেখেন।

তিনি জাহিদ হাসান নামের এক ইলেকট্রিশিয়ানকে জানিয়ে শিশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। জাহিদ হাসান ওই শিশুকে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সঙ্গে শিশুর দাদিকে নিয়ে আসেন।

শিশুটির দাদি জোবেদা বেগম বলেন, তিন মাস আগে তাঁর ছেলে সোহেল রানা (মহিমার বাবা) মারা যান। মহিমার মা মর্জিনা খাতুন মানসিক প্রতিবন্ধী। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর মর্জিনা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সব সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। শিশুর শরীর গরম তরকারিতে  ঝলসে যাওয়ার পর বাড়িতে রেখে বিভিন্ন ধরনের গাছের রস দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। টাকা না থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। শিশুটির মা-ও মেয়ের সেবাযত্ন করতে পারেন না। জোবেদা বেগম কান্নাজড়ি কণ্ঠে বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর তাঁরা ঠিকমতো খেতে পান না। এরপর কীভাবে চিকিৎসা করাবেন? তিনি নাতনির চিকিৎসার জন্য সহায়তার আহ্বান জানান।

মহিমাকে হাসপাতালে নেওয়া গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান জাহিদ হাসান বলেন, শিশুর পরিবার অসহায় ও অসচেতন। বাড়িতে শিশুটি ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। সেখানে রেখে গ্রাম্য চিকিৎসার নানা রকম ক্ষতিকারক উপকরণ ঝলসে যাওয়া স্থানে ব্যবহার করা হচ্ছিল। তিনি জানার পর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে শিশুর এমন অবস্থার খবর পেয়ে বাগমারা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে যাই। শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে।’

এএইচ/এস