পাহাড়ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ২২ হাজার রোহিঙ্গা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ২২ হাজার ৪০০ রোহিঙ্গা। এ তথ্য জানিয়েছে আশ্রয়শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি’।

২৪ জুলাই আইএসসিজির দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, পাহাড়ধসের মোট ঝুঁকিতে আছে ২ লাখ ১৬ হাজার রোহিঙ্গা। ২২ জুলাই পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ৩০ হাজার ৩৭৫ জনকে।

গতকাল শুক্রবারও প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। গত তিন দিনের ভারী বর্ষায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে। গতকাল সকালে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি আশ্রয়শিবির ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবির। উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে প্রশাসন গত জুনে এটিকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। কারণ, এ শিবিরের ৩৭ হাজার ৬৮৬ জন রোহিঙ্গার বসতি উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে।

গতকাল সকালে হাকিমপাড়া শিবিরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। এতে ৪০-৫০টি ত্রিপলের বসতি ভেঙে গেছে। কিছু ঘর পাহাড়ের খাদের কিনারে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ঘরের তলার মাটি সরে গেছে। ঘরগুলো হেলে পড়ছে নিচের দিকে।

এই শিবিরের ডি ব্লকের প্রায় ৭০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের ঢালুতে ছলেমা খাতুনের দোচালা ছোট ঘর। বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি ঘরটিতে থাকেন ছলেমার মা, তিন ছেলেমেয়ে ও দুই ভাইবোনসহ সাতজন। ঘরটির এক কোনার তলার মাটি সরে গেছে। আশপাশের আরও পাঁচটি ঘরের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। নিচের দিকে হেলে পড়ছে তিনটি ঘর।

ছলেমা খাতুন (৩৭) বলেন, গতকাল সকালে বৃষ্টির পানি ঢুকে আরও মাটি সরে গিয়ে ঘরটি হেলে পড়ছে। প্রাণহানির আশঙ্কায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাশের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাথা গোঁজার বিকল্প ঠাঁই হয়নি।

ছলেমার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলীবাজারে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাঁর স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। ধরে নিয়ে যায় বাবা ও দুই ভাইকে। এখনো পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ নেই। আশ্রয়শিবিরে চাল, ডাল, তেলসহ সবকিছু পাওয়া গেলেও শান্তি নেই। সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়া করে বেড়ায়।

এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলে তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবির। প্রশাসন এটিকেও ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই শিবিরে রোহিঙ্গা আছে ৪১ হাজার ৮৩৩। ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গার বসতি পাহাড়ের ঢালুতে। গত তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসে এখানেও দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে।

টেকনাফের সাতটি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে দুটি চাকমারকুল ও উনচিপ্রাং শিবিরের কিছু অংশে পাহাড় আছে। পাহাড়গুলো অপেক্ষাকৃত নিচু বলে প্রশাসন ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই দুই শিবিরে আছে ৪৪ হাজার রোহিঙ্গা।

দুপুরে চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরে কথা হয় কলিম উল্লাহর (৪৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই শিবিরের অসংখ্য ঘর ঢলের পানিতে ডুবে থাকে। এ সময় নারী-শিশুদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

আইএসসিজির তথ্য

আইএসসিজির তথ্যমতে, ২৪ জুলাই পর্যন্ত শিবিরগুলোতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ১৬৬টি। ভারী বর্ষণে বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ২৪টি শিবিরে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ জন, ঝোড়ো হাওয়ায় ২১ হাজার ৬০০ জন, আগুনে ৪৪ জন ও বন্যায় ৩ হাজার ৫০০ জন। পাহাড়ধসের ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৯ জন।