পাহাড়ে মমতার সঙ্কটের পিছনে কি বিজেপি!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: পাহাড় জ্বলছে। প্রথম দিনের বিক্ষোভের চেহারাই বলে দিচ্ছে সহজে নেভার নয় এই আগুন। পরিস্থিতি পুলিশ ও সেনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাজনৈতিক উত্তাপ থেকে সহজে রক্ষা পাবে না বাঙালির প্রিয় পর্যটন শহর দার্জিলিং।

রাজনীতির আগুনে পাহাড় জ্বলছে। প্রথম দিনের বিক্ষোভের চেহারাই বলে দিচ্ছে সহজে নেভার নয় এই আগুন। পরিস্থিতি পুলিশ ও সেনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাজনৈতিক উত্তাপ থেকে সহজে রক্ষা পাবে না বাঙালির প্রিয় পর্যটন শহর দার্জিলিং। কারণ, পাহাড় নিয়ে রাজনীতি নতুন নয়। আর সেই রাজনীতিতে এখন লেগেছে নতুন রং।

বাম আমল থেকেই পাহাড় বারবার রাজ্য প্রশাসনের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে সুবাস ঘিসিং-এর গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ)-কে নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে জ্যোতি বসু কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারকে। পাহাড়ে ঘিসিং-এর দাপট কমতেই নতুন করে শক্তি নিয়ে পাহাড়ে আগুনে রাজনীতি শুরু করে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এর পরে জিটিএ গঠন করে কিছুদিনের জন্য পাহাড়কে শান্ত রাখতে পারলেও তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।

২০০৯ সালে জিজেএম-এর সঙ্গে হাত মেলায় গেরুয়া শিবির। মোর্চার সমর্থনে পাহাড় থেকে দিল্লি যান বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া। মাঝে কিছুদিন পাহাড় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলেও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে পুরনো পথেই হাঁটে মোর্চা। বিজেপির আলুওয়ালিয়াকেই জেতায় বিমল গুরুংদের সমর্থন।

বুধবার কলকাতায় দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বৈঠকে রোশন গিরি-সহ মোর্চা বিধায়করা।— ছবি: বিজেপি

গুরুংদের সঙ্গে সমতল রাজনীতির বোঝাপড়া বারবার রং বদলেছে। কখনও তৃণমূল কংগ্রেস, কখনও বিজেপির সঙ্গে সখ্য দেখা গিয়েছে মোর্চার। এখন যে তৃণমূল বিরোধী মনোভাব নিয়েছেন বিমল গুরুংরা তার পিছনেও রয়েছে রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এক দিকে পাহাড় ঘাসফুলের দাপট প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য। অন্য দিকে, পাহাড়ে নিজেদের মুঠোয় রাখতে মোর্চার মরণপণ লড়াই। এ বার সেই লড়াই সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গে আগুনে যুদ্ধের রূপ নিল।

উল্লেখযোগ্য ভাবে পাহাড়ে এই আগুনে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেই বুধবার রোশন গিরির নেতৃত্বে মোর্চা বিধায়ক দল রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতায়। সেই বৈঠকের পরে পরেই দার্জিলিংয়ে উত্তাপ ছড়ানোর পিছনে বিজেপির মদত নেই তো? এমন প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে খুব একটা রাখঢাক করতে চাইলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ দিন তিনি এবেলা.ইন-কে টেলিফোনে বলেন, ‘‘পাহাড়ে এমনটাই হওয়ার ছিল। বারবার পাহাড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে চলেছেন তারই ফল পেলেন হাতে নাতে।’’

তাঁর সঙ্গে বৈঠেকর পরের দিনই এমন জঙ্গি আন্দোলন। বৈঠকে কি এমন তাঁকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোর্চা প্রতিনিধিরা? দিলীপ বলেন, ‘‘পাহাড়ে যে আরও জোরালো আন্দোলন হবে সেই ইঙ্গিত কলকাতায় এসে বলে গিয়েছেন মোর্চা প্রতিনিধিরা।’’ এরই সঙ্গে দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সব সময়ে যে কোনও ইস্যুতে অস্বস্তিতে ফেলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ। নোট বাতিল থেকে জিএসটি সবেতেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করার নীতি নিয়ে চলছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড় রাজ্য সরকারকে শিক্ষা দিল। এটাই পাওনা ছিল তৃণমূলনেত্রীর। তিনি ঠিক যে কাজটা কেন্দ্রের সঙ্গে করেন সেটাই ফিরিয়ে দিচ্ছে পাহাড়। এটা হওয়ারই ছিল।’’