পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনিশ্চয়তা প্রাইভেট মাদরাসা শিক্ষার্থীদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রাইভেট মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অথচ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে। এ ব্যাপারে মাদরাসা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফুল্লাহর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন প্রাইভেট মাদরাসার প্রধানরা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি-পাঠদানের অনুমতি নেই, তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্যই এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল।

মাদরাসা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী নিবন্ধিত মাদরাসা থেকে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি ও প্রাইভেট মাদরাসার সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এটি শুধুমাত্র চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য।

তবে প্রাইভেট মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষকরা বলছেন, প্রাইভেট মাদরাসাগুলো ২০১১ সালে সমাপনী পরীক্ষা শুরুর বছর থেকেই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছে। এসব মাদরাসায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত এবং মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠসূচি অনুসরণ করেই পাঠদান করে আসছে। কিন্তু কোনো ঘোষণা ছাড়াই বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফুল্লাহ পদ হারানোর কিছু দিন আগে গত ২৯ মে প্রাইভেট মাদরাসার বিরুদ্ধে শর্ত জারি করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো একটি স্মারকে উক্ত নির্দেশনা জারির অনুরোধ করেন।

গত ১৩ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সকল উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অনুমোদিত সব মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ মাদরাসার নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা পাঠায়।

আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বর্তমানে নিবন্ধন চলছে। ডিপিইর নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা প্রাইভেট মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

প্রাইভেট মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েক দফায় সাক্ষাৎ করেও গতকাল সোমবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তারা বলছেন, দেশে নিবন্ধিত মাদরাসার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। পার্শ্ববর্তী নিবন্ধিত মাদরাসাগুলো অনেক দূরে দূরে হওয়ায় কোমলমতি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবক ও প্রাইভেট মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তারা বিষয়টির দ্রুত সুরাহা দাবি করেন।

প্রাইভেট মাদরাসার পরিচালকদের অভিযোগ, মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার কারণেই এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। একই সিলেবাসে ও পাঠ্যক্রমে কিন্টারগার্টেনগুলোও পরিচালিত হচ্ছে। তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে সমাপনীতে অংশ নিতে বাধা নেই। অথচ মাদরাসার ক্ষেত্রে একের পর একে বাধা-প্রতিবন্ধকতা দেয়া হচ্ছে। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার।

এ বিষয়ে সাভার জাবালে নূর মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘একই পদ্ধতিতে যেহেতু কিন্ডারগার্টেনগুলো পরীক্ষা দিচ্ছে, সুতরাং আমরা মনে করি বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমাদের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারটাও এভাবেই দেখবেন।’

তিনি বলেন, ‘ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকে তারা সাধারণত ১০ থেকে ১১ বছর বয়সের হয়ে থাকে। এ বিধি আরোপিত হলে এ সকল কোমলমতি মাদরাসা শিক্ষার্থীরা হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হবে।’

এ বিষয়ে মাদরাসা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ বলেন, ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এবং প্রাইভেট মাদরাসার সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। এটি নিরসন হওয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘মানসম্পন্ন মাদরাসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে এক ধরনের শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। তা বাস্তবায়নে পরিসংখ্যান সঠিক হতে হবে। কারো প্রতি বৈষম্য সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সবাই এ মাটির সন্তান।’

সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফুল্লাহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যেসব মাদরাসার স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি নেই, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে নিকটবর্তী প্রতিষ্ঠানের অধীনে ইবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ নিয়ে বৈষম্য বা পরীক্ষার্থীদের হয়রানির কিছু নেই।’