পাবনায় যে স্টেশন ঝিমিয়ে কাটায়!

এক আকাশ মেঘ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা দুই কপোত কপোতী বাকবাকুম বাকবাকুম করতে করতে গন্তব্যে এসে পৌঁছলাম। পাক্কা আড়াই ঘণ্টা উড়ে গেল রাজশাহী থেকে গাড়ি হাঁকিয়ে আসতে। নেমে দেখি সুনসান নীরবতা সবখানে ছড়িয়ে, বেলা যদিও তখন দ্বিপ্রহর পেরিয়েছে।

ঘুরে ঘুরে নতুন তৈরি এই পাবনা রেল স্টেশন দেখতে লাগলাম। সুন্দর করেই সব সাজানো। সবে চালু হয়েছে, কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা সাকুল্যে একটা। সেই সবেধন নীলমণি সকাল আটটায় আমাদের রাজশাহীর দিকে রওনা হয়ে যায় আবার বিকেল পাঁচটায় সে পাবনা মুখো হয়। ব্যস, এত বড় স্টেশনে আপাতত এটুকুই কায়কারবার।

বাকি সময়টুকু প্রায় জনশূন্য অবস্থায় এ স্থাপনা মুখ থুবড়ে থাকে। ঠিকঠাক কবে চালু হবে, উপস্থিত দু-চারজনের কেউই বলতে পারল না। জীবনভর স্টেশনের একটা গমগমে চেহারা আর হইহল্লার চরিত্র দেখে বড় হয়েছি, পাবনা তার পুরোপুরি ব্যতিক্রম।

টিকিটঘর, বিশ্রামাগার, ওভারহেড ষ্টীলের ব্রীজ সবই আছে, নেই শুধু কর্মী আর যাত্রী। এই চা-চা করে চেঁচানো চাওয়ালা কিংবা সস্তা বই নিয়ে হকারের দেখা পাওয়ার আশা না করাই ভালো। হালকা হোটেল-রেস্তোরাঁর চিহ্নও মিলবে না। জনবিরল এমন জায়গায় ভুল করেই বোধহয় একজন মুড়ি-চানাচুর ভাজাওয়ালাকে পাওয়া গেল।

গিন্নীর পছন্দের জিনিস, তাই পাকড়াও করতে ভুল হলো না। যে ক’জন প্ল্যাটফর্মে ভবঘুরের মতো ঘুরছিল, বেলা বাড়ায়, এবার পেটের টানে তারাও উধাও হলো। অবশেষে রইল শুধু ভেজা বাতাসের দাপাদাপি আর একরাশ শূন্যতা।

মাথার মধ্যে ফেনিয়ে উঠল ছেলেবেলার সেই কথা, ঠিক দুপুর বেলা ভুতে মারে ঢেলা … ! ওরে বাবা রে, গভীর রাতে না জানি এই পাষাণপুরীতে কারা ঘুরে বেড়ায়! না, না.. আর একটুও সময় এখানে নয়। এবার ছুটতে হবে শহরে, সুচিত্রা সেনের বাড়ির দিকে। আজ কিছুটা সময় মহানায়িকা খুশি মনে আমাদেরকে দিয়েছেন, তাই এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না। যাই, বিদায়, শূন্যবেলায় …

লেখক যুবায়ের হাসান