পাকিস্তানে বন্দি পাইলটকে ফেরত দিতে ভারতের চাপ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পাকিস্তানে আটক ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ ২১ যুদ্ধবিমানের পাইলট অভিনন্দনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে ফেরত চায় ভারত। পাকিস্তানে এ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়।পরে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আটক পাইলটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এর পর ভারত আটক ওই পাইলটকে নিরাপদে ফেরত চেয়েছে। খবর এনডিটিভির।

বুধবার ভারতের পক্ষথেকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তাকে ফেরত চায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের পরে প্রতিবেশী দেশের কোনো পাইল এমনভাবে আটকা পড়ে। কয়েক দশকে এমন ঘটান ঘটেনি।

এদিকে বুধবার বিকালে পাক উপরাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয় সাউথ ব্লকে। সেখানে তাকে কড়া বার্তা দিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া পাইলটকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সেই সঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় পাইলটের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা জেনেভা সম্মেলনের শর্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওই পাক দূতকে প্রশ্ন করা হয়, কেন পাকিস্তান সরকারি ভাবে ভারতকে জানায়নি যে তারা ভারতীয় পাইলটকে গ্রেফতার করেছে?

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তারাও দাবি করেছেন, ছবিতে দেখা ওই ব্যক্তি যদি সত্যি ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ-২১-এর নিখোঁজ পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন হন, তাহলে তার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করার কোনো অধিকার নেই পাকিস্তানের।

তাদের দাবি, উইং কমান্ডারের সঙ্গে মানবিক ব্যবহার করা উচিত পাকিস্তানের। যুদ্ধবন্দির মর্যাদাও দেওয়া উচিত।

১৯৪৯-এর জেনেভা কনভেনশনে পরিষ্কার বলা আছে, দু’টি দেশের মধ্যে এ রকম সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষের কোনো বাহিনীর সদস্য যদি অন্য পক্ষের এলাকায় সেখানকার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, তবে তাকে যুদ্ধবন্দির মর্যাদা দিতে হবে। জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, একজন যুদ্ধবন্দির একাধিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১-এর যুদ্ধে এ রকম ভাবেই ভারতীয় বাহিনীর হাতে এক পাক বিমান বাহিনীর পাইলট ধরা পড়ে। ২২ মার্চ ১৯৭১। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যশোরের একটা বড় অংশ তখন ভারতীয় সেনার দখলে। ৪ শিখ রেজিমেন্টের ছাউনি লক্ষ্য করে বোমা ফেলতে গিয়ে পাল্টা হামলায় ভেঙে পড়ে একটি পাক ফাইটার।

পাইলট প্যারাশুটে করে নামলে তাকে ঘিরে ধরেন ভারতীয় জওয়ানরা। সেখানে শিখ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এইচ এস পনাগ। তিনি মারমুখী জওয়ানদের হাত থেকে ওই পাক পাইলটকে উদ্ধার করে জেনেভা কনভেনশনের নিয়ম মেনে তাকে নিয়ে যান বাহিনীর সদর দফতরে।

ওই পাইলটই ছিলেন ’৭১-এর যুদ্ধে ভারতের প্রথম যুদ্ধবন্দি। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই পাইলট পারভেজ কোরেশি মেহেদিকে। তিনিই পরবর্তীতে পাক বিমান বাহিনী প্রধান হয়েছিলেন।

বুধবার পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢোকায় দুই ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার দাবি করছে পাকিস্তান। এ সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুই পাইলটকে আটক করে পাক সেনারা। এর পর পাকিস্তান ভারতীয় পাইলট আটকের একটি ভিডিও প্রকাশ করে।

পরবর্তীতে বুধবার রাতে ডন টিভি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলটের হাতে একটি চায়ের কাপ। বেশ হাসিখুশিতেই তিনি আছেন। গল্প করছেন।

পাকিস্তানে আটক ভারতীয় ওই পাইলটের নাম অভিনন্দন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন। অভিনন্দন বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী খুব ভালোভাবে আমার যত্ন নিচ্ছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর উয়িং কমান্ডার অভিনন্দন বলেন, আমি এই ঘটনাটিকে রেকর্ডের কাতারে ফেলব। আমি দেশে ফিরে যাওয়ার পরেও আমার এমন বক্তব্য পরিবর্তন করব না।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানে বালাকোট এলাকায় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে বোমা হামলা চালায়। ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে এতে অনেক জঙ্গি হতাহত হয়েছে। তবে পাকিস্তান বলছে, এতে তাদের দেশে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এর পর এদিন বিকালে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক গোলা বর্ষণ করে। এতে ভারতীয় দুই নাগরিক নিহত হওয়া দাবি করা হয়েছে। বুধবার সকালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় দুটি বিমান ঢুকে পড়লে পাকিস্তান তা ভূপাতিত করে। এ ঘটনায় দুইজন নিহত ও দুই ভারতীয় পাইলটকে আটকের দাবি করে পাকিস্তান।