নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বিলজুড়ে চাষ হয়েছে আলু। মাটির ভেতরে থোকায় থোকায় আলু আর আলু।
এই আলু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। একেক বিঘা জমিতে আলু পাওয়া যাচ্ছে ৮০-৯০ বস্তা (৫৫ কেজি) করে। মাঠভরা আলু সংগ্রহ করতে গিয়ে দারুণ খুশি কৃষকরা; কিন্তু এই হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে বাজারে গিয়ে। কারণ এক বস্তা আলু বেচে একজন শ্রমিকের মজুরিও উঠছে না। কেজিপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। তাও এত পরিমাণ আলু যে কেনারও লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে কৃষকরা। তারা জানায়, এই অবস্থা রাজশাহী অঞ্চলজুড়েই।
বাগধানী এলাকার আলু চাষি হযরত আলী জানান, বাজারে ৫৫ কেজির প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা দরে।
সেই হিসাবে এক বিঘা জমির আলু বেচে পাওয়া যাচ্ছে বড়জোর ২৫ হাজার টাকা; কিন্তু এক বিঘায় আলু চাষে খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। ফলে গতবারের মতো এবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা। আর যাদের ফলন খারাপ হয়েছে বা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছে, তারা পড়বে আরো লোকসানে। কারণ এক বিঘা জমি লিজ বাবদই অতিরিক্ত ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ হিসাবে জমি লিজ নেওয়া চাষিদের বিঘাপ্রতি খরচ হবে অন্তত ৪০ হাজার টাকা। আলুর যে দাম তাতে খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না। আবার হিমাগারে এবার আলু রাখতেও অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। এ কারণে অনেকেই হিমাগারের ভাড়ার টাকাও সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে অনেকেই কম দামেই আলু বেচতে বাধ্য হচ্ছে।
কৃষক আকবর আলী বলেন, এবার আলুর ফলন ভালো হলেও দাম কম। উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত বছর ৮৫ কেজির এক বস্তা আলুর দাম ছিল ৯০০-৯৫০ টাকা; এ বছর সমপরিমাণ আলু বিক্রি করে এর অর্ধেক টাকাও উঠছে না। এবার প্রতি বস্তায় নেওয়া হচ্ছে ৫৫ কেজি। এই হিসাবে এবার দুই বস্তা আলু বেচে দাম পাওয়া যাচ্ছে বড়জোর ৬০০ টাকা।
পবার বড়গাছী গ্রামের আলু চাষি গুলবার আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে সব মিলে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া এক বস্তা আলু হিমাগারে পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। হিমাগারে এক বস্তা আলু ১৫০ টাকা করে খরচ (ভাড়া) দিতে হবে। আবার বাকিতে রাখলে আরো ১০০ টাকা করে বস্তাপ্রতি বেশি দিতে হবে। এত টাকা হিমাগার ভাড়া দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
দুর্গাপুর উপজেলার আমগাছী গ্রামে আলু চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে ৫৫ কেজির এক বস্তা আলু বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা। এই দামে আলু বেচে কৃষকের ক্ষতিই হবে। তার পরও হাটে আলু কেনার মতো লোক নেই। ফলে দিশাহারা হয়ে পড়ছে কৃষকরা।
পবার হিমালয় কোল্ডস্টোরের (হিমাগার) ব্যবস্থাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, হিমাগারগুলোতে আলু আসতে শুরু করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আলু পুরোদমে হিমাগারে চলে আসবে। গত বছর ৩৬৫ টাকা (ভাড়া) করে নেওয়া হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ কেজির বস্তা। তবে এবার বস্তায় ৫৫ কেজির বেশি আলু নেওয়া যাবে না বলে কৃষকদের বাড়তি খরচ হবে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে ২৭-২৮টি হিমাগার রয়েছে। হিমাগারগুলোতে ৩০ লাখ বড় বস্তা (৮৫ কেজি) এবং ৫০ লাখ ছোট বস্তা (৫৫ কেজি) আলু রাখা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, গত বছর রাজশাহীতে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এবার হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টরে। হেক্টরপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ টন আলু উৎপাদন হয়েছে।
স/আর