পশ্চিম রেলেওয়ের জিএম যখন টিটিই

নিজস্ব প্রতিবেদক :

শুক্রবার সকাল আটটা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মিনিট বিশেক আগে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি সবেমাত্র রাজশাহীর সরদাহ স্টেশন পার হয়েছে। এর মধ্যেই সাদা পোশাক পড়া কয়েকজন ট্রেন টিকিট এক্সামিন (টিটিই) এসে হাজির ট্রেনের ‘গ’ বগিতে। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে বলছেন, ‘টিকিট।’ তখন যাত্রীরা পকেট বা কাছে থাকা ব্যাগ থেকে বের করে দিচ্ছেন টিকিট।

ওই বগিতেই এক যাত্রী নিজেকে পরিচয় দিলেন তিনি রেলওয়ের স্টাফ। এসময় টিকিট পর্যবেক্ষণকারীদের একজান মাঝারি গড়নের ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি পশ্চিম রেলওয়ের জিএম।’ প্রতি উত্তরে টিকিটহীন ওই ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘স্যার আপনি?’

এর পর রেলওয়ের ওই কর্মচারীকে জিএম (মহাব্যবস্থাপক) অসিম কুুমার তালুকদার আইডি কার্ড দেখাতে বললে তিনি বের করে দেখান।

জিএম পরিচয় পেয়ে ওই সময় যাত্রীরাও তাঁর দিকে অবাক তাকিয়ে থাকেন। এসময় যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘স্যার খুব ভালো করেছেন। টিকিটহীন যাত্রীদের কারণে অনেক সময় ট্রেনের সিটেও বসে থাকা যায় না। এখন থেকে সেটি রোধ হবে মনে হয়।’


জিএম অসিম কুমার তালুকদারের কাছে আরেক যাত্রী মুরসালিন হোসেন অভিযোগ করে বলেন, স্যার অধিকাংশ সময় রাজশাহী স্টেশনের এক নম্বর কাউন্টারে লোক থাকে না। বিষয়টি দেখবেন। প্রতি উত্তরে জিএম বলেন, এখন থেকে সবসময় থাকবে।
ওই ট্রেনের আরেক যাত্রী ছিলেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রেলওয়ের জিএম নিজে টিকিট চেক করতে নেমে পড়েছেন এটা সত্যিই অবাক করা বিষয়। এতে করে ট্রেনের যাত্রীসেবার মাণ বৃদ্ধি পাবে। কারণ টিকিটহীন যাত্রীদের দাপটে ট্রেনে ওঠা দায় হয়ে পড়ে। সঠিকভাবে জরিমানা আদায় হলে টিকিটহীন যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে সাহস পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট নিয়ে কাউন্টারে আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে। আজকেও ট্রেনের অনেক সিট ফাঁকা। কিন্তু কাউন্টারে টিকিট নাই। এর জন্য অনলাইনে প্রয়োজনে শতভাগ টিকিট ছেড়ে দিতে হবে।

ওই ট্রেনের টিটিই রায়হান কবির সুমন বলেন, অনেক সময় আমরা নানা কারণে জরিমানা করতে পারি না যাত্রীদের চাপের কারণে। কিন্তু জিএম স্যার থাকলে জরিমানা আদায় সহজ হয়। টিকিটহীন যাত্রীরা যারা জরিমানা দিতে চান না জিএম স্যারের পরিচয় পেলেই ভয়ে দ্রুত টাকা বের করে দেন।’

টিটিই সুমন আরো বলেন, ‘এর আগে কখনো কোন জিএম নিজে ট্রেনের টিকিট চেক করতে বের হতেন না। কিন্তু এই স্যার (অসিম কুমার তালুকদার) আসার পর থেকে তিনি গভীর রাতেও বের হন টিকিট চেক করতে। আবার কখনো কখনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেনে ফেরা যাত্রীদের টিকিট চেক করেন।’

ট্রেনের ওই বগিতেই ছিলেন এই প্রতিবেদক। জিএম অসিম কুমার তালুকদার এ প্রসঙ্গে তিনি  বলেন, ‘ট্রেনের টিকিটহীন যাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত টাকার বড় একটি অংশ চলে যায় ট্রেনের টিটিইসহ অন্য কর্মচারীদের পকেটে। এ নিয়ে কালের কণ্ঠেই একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখেছি আমি যোগদানের পরই। এর পর তখন থেকেই আমি সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি ট্রেনের টিকিট চেক করতে। ছদ্দবেশে ট্রেনে উঠে টিটিইদের সঙ্গে টিকিট চেক করি। তাতে টিকিটহীন যাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত শতভাগ টাকা রেলওয়ের কষাগারে জমা হচ্ছে।

আবার যাত্রীদের মাঝেও সচেতনতা তৈরী হচ্ছে। টিকিটহীন যাত্রীদের দ্বিগুন জরিমানা করার কারণে তারা আর ভবিষ্যতে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠার সাহস পাবে না।

স/আর