সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা আসা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়েপ এরদোয়ান মঙ্গলবার রাশিয়া যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে।
তার এ সফর পশ্চিমাদের ভাবনায় ফেলে দেবে বলে এরদোয়ান আশা করতে পারেন-এমনটাই বলা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
সেন্ট পিটার্সবার্গে এরদোয়ানের এ সফর নেটোর সদস্যপদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে প্রার্থিতা থেকে তুরস্কের সরে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না বলে জোর দিয়ে বলছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এটা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের একটি পদক্ষেপ, যা ১৫ জুলাই সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার কয়েক সপ্তাহ আগেই ঠিক হয়েছিল।
নয় মাস আগে তুরস্ক সিরীয় সীমান্তের কাছে একটি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর দেশটির উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মস্কো। এখন দুই দেশের সম্পর্কে উষ্ণতা এমন সময়ে আসছে যখন পশ্চিমের সঙ্গে আঙ্কারার বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে।
পশ্চিমারা অভ্যুত্থান চেষ্টার পর দমনাভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানালেও ১৫ জুলাইয়ের রক্তাক্ত ঘটনা, যেখানে ২৩০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি এবং বিদ্রোহী সেনাদের পার্লামেন্ট বোমাবর্ষণ, ট্যাংক ও হেলিকপ্টার দিয়ে ব্রিজ অবরোধের মতো ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতি তারা উদাসীন ছিলেন বলে অভিযোগ এরদোয়ানসহ অনেক তুর্কির।
এই অভ্যুত্থান চেষ্টার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা একজন ধর্মীয় নেতার অনুসারীদের দায়ী করছে তুরস্ক সরকার। তার কয়েক হাজার অনুসারীকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে হাজারো শিক্ষক, বিচারক ও সৈনিককে।
এরদোয়ান সরকারের এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ খুব দ্রুত ও বাছবিচারহীনভাবে হয়েছে বলে সমালোচনা করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
উভয়পক্ষের সম্পর্কের এতো অবনমন হয়েছে যে, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সপ্তাহে বলেছেন, তুরস্কের সঙ্গে আলোচনার মতো আর কোনো জায়গা নেই।
“আমরা দুটি ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দাদের মতো একে অপরের সাথে কথা বলেছি।”
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ইইউতে তুরস্কের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিতের প্রস্তাব করেছেন।
তুরস্কের সাবেক কূটনীতিক ‘কার্নেগি ইউরোপ’র বিশ্লেষক সিনান উলজেন বলছেন, “পুতিনের সঙ্গে এই বৈঠক এরদোয়ানের জন্য পশ্চিমা অংশীদারদের একটি বার্তা দেওয়ার সুযোগ যে, তার অন্য কৌশলগত সুযোগ রয়েছে।”
“এখানে এই ভাবনার খেলা রয়েছে যে, পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে না রাখা গেলে তুরস্ক কৌশলগতভাবে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে। এছাড়া তুরস্ক ও পশ্চিমের মধ্যে এই সঙ্কট ব্যবহার করে নেটোর সংহতি ক্ষুণ্নে রাশিয়ার দিক থেকেও একটা ছাড় রয়েছে।”
তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার পর দ্বিতীয় কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বসছেন এরদোয়ান। এর আগে শুক্রবার কাজাখ প্রেসিডেন্ট আঙ্কারা সফর করেন। পশ্চিমা কোনো নেতা কেন সংহতি জানাতে তুরস্কে এলেন না তা নিয়েও দেশটির কর্মকর্তাদের প্রশ্ন রয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ থিংক ট্যাংক রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের মহাপরিচালক আন্দ্রে কর্তুনোভ বলেন, “পশ্চিম যতটা উদ্বিগ্ন রাশিয়া ও তুরস্ক ততোটাই বন্ধুহীন।”
“এ প্রেক্ষাপটে ব্যর্থ অভ্যুত্থান তুরস্ককে রাশিয়ার কাছে এনেছে। কিন্তু এখনও দুই দেশের মধ্যে অনেক দূরত্ব রয়ে গেছে।”
সিরিয়া নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে: মস্কো প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিলেও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে তুরস্ক। দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়ার বিপক্ষে আজারবাইজানকে সমর্থন যোগাচ্ছে তুরস্ক।
“পুতিন ও এরদোয়ানের বৈঠকে দেখা যাবে দুই পক্ষ কত দূর ছাড় দিতে ইচ্ছুক। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে, বর্তমানের কৌশলগত নমনীয়তা গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপ নেয় কি না।”
সূত্র: বিডি নিউজ