পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত কর্মকর্তারা

আব্দুর রহিম:

চিকিৎসক ও নার্স সংকটে ভুগছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের হাসপাতালগুলো। এ অঞ্চলের ৬টি হাসপাতালে ৩৪জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৮জন। এর মধ্যে এডিএমও এর ২টি পদের ২টিই শূন্য এবং সহকারী সার্জনের ২৬টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৪টি পদ। এসব হাসপাতালে সিনিয়র নার্স থাকার কথা ৩০ জন, কিন্তু রয়েছেন মাত্র ২০জন এবং ফার্মাসিস্ট ৩৩জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৫জন। এ অবস্থায় সেবা না পেয়ে এসব হাসপাতালের উপর আস্থা হারাচ্ছেন রোগিরা। চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে দির্ঘদিন থেকে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে হতাশ এ অঞ্চলের রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ৬টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ২০ শয্যা বিশিষ্ট, নীলফামারির সৈয়দপুরে ৯০ শয্যা বিশিষ্ট, লালমনিরহাটে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট, পার্বতিপুরে ১৬ শয্যা বিশিষ্ট, পাবনার পাকশীতে ৮০শয্যা এবং সান্তাহারে ৮০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে।

সৈয়দপুরে ৯০ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৭ টি এর মধ্যে ৫টি পদই শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়ে চলছিলো সেবা প্রদান। তবে সম্প্রতি একজন ডেন্টাল সার্জন এখানে যোগদান করেছেন। লালমনিরহাটে ৩০ সয্যা বিশিষ্ট রেলওয়ে হাসপাতালে ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। পার্বতিপুরের ১৬ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও একজনও চিকিৎসক নেই এই হাসপাতালে।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় সাস্থ্যসেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে পাবনার পাকশি রেলওয়ে হাসপাতাল। এখানে ১৩ জন চিকিৎসক পদের বিপরিতে রয়েছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। সান্তাহারে ২জনের বিপরিতে চিকিৎসক রয়েছেন একজন। আর রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসক পদের বিপরিতে রয়েছেন ২জন চিকিৎসক। প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে এসব হাসপাতালের উপর আস্থা হারাচ্ছেন রোগীরা।

এই হাসপাতালগুলোতে রেলওয়ের চাকুরিজীবীদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করার কথা থাকলেও দির্ঘদিন যাবৎ এমন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এই হাসপাতালগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কর্মকর্তা, কর্মচারিরা। তারা বাধ্য হয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন বাইরের হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিক সেন্টারে। রেলওয়ে সূত্র মতে, ১৯৬৮ সালে বৃটিশ আমলে নির্মান করা হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের হাসপাতালগুলো। কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নির্মিত এই হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবা তো দুরের কথা নিজেই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে রেলওয়ে চাকুরিজীবীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন না।

এ বিষয়ে পশ্চিম রেলওয়ের চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. শামছুল আলম মো. এমতেয়াজ জানান, রেলওয়ের সকল নিয়োগ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মন্ত্রনালয় কখন নিয়োগ দেবে সেটা আমাদের জানা নেই। তবে সা¤প্রতিক সময়ে ১৬ জন এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের ট্রেনিং চলছে, ট্রেনিং শেষে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টিং দেওয়া হবে।

শুধু চিকিৎসক ও নার্সই সংকট নয়। এসব হাসপাতালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারির অভাবও প্রকট। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের হাসপাতালগুলোতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর ৮০২ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩৮৩ টি। এর মধ্যে মেট্রোন ১ টি পদের বিপরিতে কেউ নেই। ষ্টেনোগ্রাফার ১টি পদ ও শুন্য। স্টোরকিপার ৪টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি, ফার্মাসিষ্ট ৩৩ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৮ টি, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (সেনেটারী) ২টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি, সিষ্টার ইনচার্জ ৭ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১ টি। প্রধান সহকারী ৪টি পদের শুন্য রয়েছে ৩টি, উচ্চমান সহকারী ৫টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি, স্টেনো টাইপিষ্ট ৩টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি। স্টুয়ার্ড ৩টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি,এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ৫টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি, লেডি হেলথ ভিজিটর ১টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১ টি, অফিস সহ:কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ৫টির মধ্যে শুন্য রয়েছে ২টি, মিডওয়াইফ ৩টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ২টি, ওটি এসিসটেন্ট ৩টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি, পিয়ন জমাদার ৪টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি, কঞ্জারভেন্সী জামাদার ১৪ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১০ টি, এমএলএসএস( অফিস সহায়ক) ৯ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি, এক্স-রে এটেনডেন্ট ৪টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি, ওয়ার্ড এটেনডেন্ড ৫৫টি পদ থাকলেও শুন্য রয়েছে ২ টি, ওটি এটেনডেন্ট ২টি পদের কেউ নেই। ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট ৪টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১টি, চৌকিদার ১৭ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৬টি, হাসপাতাল ক্লিনার ৩৮ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৯ টি, কঞ্জারভেন্সী খালাসী ২৭ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ২২ টি, কঞ্জারভেন্সী ক্লিনার ৪৩১ টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৩৮ টি পদ।

স/র