পশ্চিমবঙ্গে কি বিজেপি ক্ষমতায় আসছে?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছরের মাঝামাঝিতে। সদ্য সমাপ্ত বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বেশ ইতিবাচক সাফল্যের পর পাশ্ববর্তী বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গেও কি বিজেপি ক্ষমতায় আসছে- এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য ও দেশের রাজনীতিতে। বিজেপি বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে হটিয়ে তারা প্রথমবারের মতো ক্ষমতা দখল করবে।

বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও সেভেন সিস্টার্স সংলগ্ন রাজ্যগুলোয় বিজেপি কখনোই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায় না, এমন কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করে, যা দলটির ইতিহাসে সাড়া জাগানো সাফল্য। এর আগে এ রাজ্যে তাদের আসন সংখ্যা কখনও দুইয়ের বেশি হয়নি। ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিতে বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতির কার্যকারিতা নেই বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু গত লোকসভার ফলাফল সব হিসাব নিকাশ উল্টে দিয়েছে।  সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন লাভ করেছে। জোটের মিত্র নীতীশ কুমারের জেডিইউকে টপকে তারাই শীর্ষ দল হিসেবে আঞ্চলিক দল আরজেডির পরে অবস্থান করছে। এ অঞ্চলে বিজেপির এমন সাফল্যের পর থেকেই জল্পনা চলছে, আগামীবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়  বিজেপি সরকার গড়বে কি না।

২০১৯ সালে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এ রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস দিয়েছিল কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর সরকার সেটিকে পাত্তা দেয়নি। এরপর লোকসভায় তারা এই বিপুল সাফল্য পায়। এবার বিহার নির্বাচনের পর তারা আরও উজ্জীবিত। গতকাল বিজেপির রাজ্য সভাপতি  দিলীপ ঘোষ আবারও ক্ষমতা দখলের হুমকি দিয়েছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ঘন ঘন রাজ্যে আসছেন। কয়েকদিন আগে রাজ্য থেকে ঘুরে গেলেন বিজেপির সদ্য সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বর্তমান সভাপতি জেপি নাড্ডারও পূর্ণ মনোযোগ এখন পশ্চিমবঙ্গে, এমনটাই জানাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

বিজেপিও তার সংগঠন গুছিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। লোকসভার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা মুকুল রায়কে দলে ভিড়িয়ে চমক লাগিয়ে দেয় বিজেপি। এরপর তৃণমূলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দলে এনে লোকসভায় সাংসদ পদে জিতিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় দলটি। তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর প্রক্রিয়া এখনও থেমে নেই। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শাসকদল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-সিপিআইএম ও সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অবস্থা নাজুক। গত লোকসভায় কংগ্রেস কোনোমতে দুটি আসন পেলেও সিপিআইএম কোনো আসনই জিততে পারেনি। এদিকে, কংগ্রেস ও সিপিএম ইতিমধ্যে জোটগতভাবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বামপন্থী কিংবা কংগ্রেসের পক্ষে নির্বাচনে জিতে আসার মত বাস্তব পরিস্থিতি এখন এ রাজ্যে নেই। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই প্রতিযোগিতা হবে, এমনটাই জানা গেছে।

বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আরও জোরালো হচ্ছে কারণ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন সারা ভারত মুসলিম ইত্তেদহাদুল মুসলেমিন (এআইএমইএম) পার্টি এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। এআইএমইএম একক নির্বাচন করলে রাজ্যের মুসলিম ভোটগুলো সিপিআইএম, কংগ্রেস ও ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ভাগাভাগি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদি এটি ঘটে তাহলে ধর্মীয় মেরুকরণের মধ্য দিয়ে বিজেপি ব্যাপক সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যাবে বলেই মনে করা হয়।

এছাড়া  রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের কর্মকান্ডে অনেকেই নাখোশ। বিগত পঞ্চয়েতসহ লোকসভা নির্বাচনেও জালভোট, ভোটকেন্দ্রে জটলা তৈরি ও প্রার্থী দিতে না দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে। দল ভাঙিয়ে বিজেপি এখন যেমন তৃণমূলের ক্ষতি করছে তেমনই তৃণমূলও  ক্ষমতায় বসার পর থেকে একইভাবে অন্য দল ভেঙেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সকল সমীকরণ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ