পল্লী শ্রী নিকেতন দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এলাকার যুবকরা

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:
নওগাঁর রাণীনগরে নিজ উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পল্লী শ্রী নিকেতন’ নামের একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবকরা এখানকার সার্বিক সহায়তায় গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

উপজেলার ২নম্বর কাশিমপুর ইউপির কাশিমপুর গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপড় গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রদর্শনী খামারটি। অত্র এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়ায় এই খামারের মুল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা অতি কম সময়ে কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করে আরো অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে খামার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ বছরের মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম। এই জনপদের অবহেলিত কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মূলত তিনি নিজ উদ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে এই খামারে দেশি-বিদেশি ব্রাহ্মা, ফিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।

এখানে অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ। গরুর সেটের টিনের উপড় প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝরণা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোন বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। ঝরনার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘন্টা সেট ঠান্ডা থাকে। এতে করে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ ও বিদ্যুৎ।

এখানে এলাকার কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশি-বিদেশি মেশ, ভেড়া ও গ্যারল পালন করা হচ্ছে। টার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করা হচ্ছে।

গুরুর গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসোবে বিক্রয় ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সার গুলো বিক্রয় হচ্ছে ২০-২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে এই বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাহিরে।

খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাহিরে বিক্রয় করা হচ্ছে। এই মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু তরকারি রান্না করা যায়। এই মাশরুম চাষ করে আমরা চাপ কমাতে পারি অন্যান্য সবজির প্রতি। খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাছের হ্যাচারি।

যেখানে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়সহ এখানে চাষ করা হচ্ছে এবং বাহিরে সরবরাহও করা হচ্ছে। রয়েছে দেশি-বিদেশি মুরগির খামার। খামারের পুকুরের পাশ দিয়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ফলদ গাছ এবং সবজি। খামারে সব কিছুই তৈরি করা হয় কোন প্রকারের রাসায়নিক কেমিক্যাল ও সার ছাড়াই। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস এই খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।

খামারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ১শত ২২টি গরু, বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল ৮০টি, পাটা ৫টি ও টার্কি পাখিসহ বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে প্রায় ৮হাজার। বর্তমানে এই খামারে এলাকার প্রায় ৫০ জন বেকার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই খামার পরিদর্শন করার জন্য। সম্প্রতি এই খামার পরিদর্শন করেছেন উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাগন।

খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলমের সঙ্গে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আবু তালেব, উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান, রাণীনগর মহিলা অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ চন্দন কুমার মহন্ত, আত্রাই এমএম ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো: জুলফিকার আলী প্রমুখ।

স/আ