পর্যটকদের হাতছানি দেয় বরেন্দ্র অঞ্চলের রামদাস বিল

গোমস্তাপুর  প্রতিনিধি:
কয়েক বছর থেকে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিণত হয়েছে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রামদাস বিল। প্রতি বছর বর্ষা মৌওসুমে পূর্ণভবা নদীর পানি উপচে এসে প্লাবিত হয় হাজার হাজার একর জমি। বিলের মাঝ পথ দিয়ে চলে যাওয়া বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের সংযোগ পাকা সড়কটি বিলকে দু’ভাগে বিভক্ত করলেও এ সড়কের উপর দিয়ে দিয়ে চলাচল এক রোমাঞ্চকর অনুভুতির সৃষ্টি করে পর্যটকদের। সড়কটি ডুবে যাওয়া হাটু পানিতে এর রোমাঞ্চকতা আরো বেড়ে যায় পর্যটকদের মাঝে। বর্তমানে রামদাস বিলটি ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে আর এর পরিচিতি বাড়ছে দিন দিন।

গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভার ৪ কিলোমিটার উত্তরে বিলটির শুরু। রাধানগর ও রহনপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে রামদাস বিলটি বিস্তৃত। এর বিশাল জলরাশি মুগ্ধ করে প্রকৃতি প্রেমিদের। বছরের দুটি মাস জুলাই-আগষ্ট বিলটি তার স্ব-রূপ নিয়ে মন কাড়ে পর্যটকদের। এ সময়ে সারাদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষের পদচারণায় মুখোরিত থাকে বিল এলাকা। কেউ বিল সাতরিয়ে গোসল করে, কেই মৎস আহরণ করে। আবার কেউ কেউ নৌকা ভাড়া করে ভেসে বেড়ায় বিলের সু-বিশাল জলরাশির বুক চিরে।

জানা যায়, প্রতিবছর এ বিলে নৌবিহারের সময় নৌকা ডুবিতে মারা যান দু’একজন পর্যটক। বিলটির মাঝে রয়েছে  এক গভীর খাড়ি। বর্ষাকালে বন্যার সময় এ খাড়ি দিয়েই উঠে আসে পূর্ণভবা নদীর পানি। আর খাড়ি দিয়েই বিলের এ বিশাল জলরাশি তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে নামে নদীতে। আর তখনি না বুঝে ওই খাড়ির উপর দিয়ে নৌকা নিয়ে গেলে মাঝিকে পড়তে হয় চরম বিপাকে। স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে বেসামাল অবস্থায় কোন রকমে রক্ষা করেন পর্যটকদের। মাঝে মাঝে, মাঝি পরাস্থ হয়ে ওই খাড়িতেই নৌকা ডুবিতে পড়েন। প্রচন্ড স্রোতে পর্যটকদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে তখনই। অথচ এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও পর্যটকদের জীবন রক্ষার্থে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে পর্যটন মৌওসুমে খাড়িতে টাংগানো হয়না লাল নিশান। মাঝিদের দেয়া হয়না কোন গাইড লাইন। নৌকায় রাখা হয়না লাইফ জ্যাকেট। ওই এলাকায় থাকেনা কোন উদ্ধার কিংবা নিরাপত্তা কর্মী।

সরেজমিনে বিলে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের নৌবিহারের জন্য রয়েছে প্রায় ১০/১৫ টি নৌকা। এরা একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে চড়া মূল্যে নৌবিহার করান পর্যটকদের। অথচ এদের কারো কাছেই নেই লাইফ জ্যাকেট। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এদের দেয়া হয়নি কোন গাইড লাইন। নেই নিয়ন্ত্রনও।
পর্যটকদের দাবী, পর্যটন মৌওসুমে বিলের গর্ভে লুকিয়ে থাকা ওই মরণঘাতি খাড়িতে তার দৈর্ঘ্যতা পর্যন্ত ৫০ মিটার পর পর লাল নিশানা টাঙানো। যাতে করে নৌকার মাঝিরা সহজেই বুঝতে পারেন খাড়িটির অবস্থান। তাহলে হয়তো নৌকা ডুবির মত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর কিছুটা স্বস্তিতে নৌবিহারে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে এ্যাডঞ্চোর প্রিয় ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা।

কথা হয়, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মহিশো গ্রাম থেকে সপরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা তৈয়বুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, বিলের বিশাল জলরাশি সত্যি মনমুগ্ধকর। নৌবিহারের জন্য নৌকা থাকলেও তাদের কাছে নেই বড় টিউব বা লাইফ জ্যাকেট। ঝুঁকি নিয়েই বিলের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছেন শিশু ও পরিবার নিয়ে পর্যটকরা। তিনি আরো জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় প্রশাসনের কোন নজরদারী তার চোখে পড়েনি। অথচ প্রশাসনের নজরদারীতে বিলটি হতে পারে বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

রহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আল শফি আনসারী জানান, বর্ষা মৌওসুমে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি প্লাবিত হয়ে বিলটির বিশাল জলরাশি মন কেড়েছে পর্যটকদের।প্রতিদিন বাড়ছে দর্শণার্থীদের ভিড়। তিনি এলজিএসপি বরাদ্দ থেকে পানীয় জল ও স্যানিটেশনের সুবিধা নিশ্চিত করবেন। এছাছাড়াও রামদাস বিলটিকে পর্যটন শিল্পের আওতায় এনে পর্যটকদের জন্য এর সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে এর অবকাঠামো উন্নয়ণ এখন সময়ের দাবী বলে মনে করেন তিনি। আর এজন্য তিনি জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ জানান, রামদাসপুর বিজিবি ক্যাম্প (বডার গার্ড বাংলাদেশ) থেকে বিলের প্রধান চ্যানেল পর্যন্ত পাকা সড়কটি প্রসস্ত করলে বিলটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে। রামদাস বিলটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়তে তিনি সংশ্লীষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মূলত এ বিলটি বর্ষা মৌওসুমে এর বিশাল জলরাশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বর্তমানে বিলটির পরিচিতি বাড়ছে সাথে পর্যটকদেরও উপস্থিতি বাড়ছে। তিনি জানান, রামদাস বিলটিকে পর্যটকদের নিকট আরো আকর্ষণীয় করতে আগামী প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। পর্যটকদের নৌবিহারের জন্য নৌকায় লাইফ জ্যাকেটসহ বিলের গর্ভে লুকিয়ে থাকা খাড়িটির অবস্থান চিহ্নিত করতে লাল নিশানার ব্যবস্থা করা হবে।