পবায় ৫০০ কৃষকের ফসল তোলার রাস্তা বন্ধ করে আবাসনের গৃহ নির্মাণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করে ৫০০ কৃষকের ফসল তোলার রাস্তা বন্ধ করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ কাজটি করতে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করারও  অভিযোগ উঠেছে ইউএনও লসমি চাকমার বিরুদ্ধে। উপজেলার দামকুড়া ইউনিয়নের দেশলাপাড়া গ্রামের কাদিপুর মৌজায় কাঁচা রাস্তার ওপর গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

ওই এলাকার কৃষকেরা সোমবার দুপুর ১২টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেছেন, কাদিপুর মৌজার এক নম্বর খতিয়াতের ১৫০৩ নম্বর দাগের ৭০ শতক জমির শ্রেণি ডহর (কাঁচা রাস্তা)। এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ৫০০ কৃষক তাদের জমির ফসল ঘরে তোলেন। এখানে বাড়ি নির্মাণ করলে তাদের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। জমির ফসল ঘরে তুলতে তাদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পবার একটি কলেজের অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন। ওই মাঠে তাঁরও জমি আছে।

তিনি জানান, তিন মাস আগে ওই কাঁচা রাস্তার ওপর ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক জরিপ করা হয়। তখন স্থানীয় কৃষকেরা ইউএনওকে জানান যে ওই জমিটি এসএ ও আরএস খতিয়ানে ডহর বা কাঁচা রাস্তা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত। রাস্তাটি মাঠের কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকদের অপূরনীয় ক্ষতি হবে। কিন্তু ইউএনও কিছুতেই বোঝেননি।
গোলজার হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দুই মাস আগে ইউএনও’র তত্বাবধানে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হলে এলাকাবাসী সংক্ষুব্ধ হন। তবে কেউ গৃহ নির্মাণে বাধা দেননি।  আমি এলাকাবাসীর পক্ষে জনস্বার্থে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটি বন্ধ চেয়ে পবা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে রাষ্ট্রকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করি। এই মামলা নম্বর- ২২৬/২০২২। আইনে রাস্তার ওপর যে কোন গৃহ নির্মাণ বেআইনী হওয়ায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তির প্রকৃতি পরিবর্তন করা বা নালিশী সম্পত্তিতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা বা নির্মাণের অনুমতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালত গত ২ নভেম্বর এই আদেশ জারী করেন।’

গোলজার হোসেন আরও বলেন, ‘এই আদেশের প্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখেন ইউএনও। বর্তমানে রাজশাহী জজ আদালতে শীতকালীন এক মাসের ছুটি চলছে। এই সুযোগে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে গত রোববার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকারের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই স্থানে পুণরায় কাজ আরম্ভ করেন। এটি সম্পূর্ণ আদালত অবমাননার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘আমিসহ এলাকাবাসী সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জিজ্ঞেস করি, কেন আদালতের আদেশ অমান্য করে কাজ করছেন? তখন তিনি পুণরায় কাজ শুরু করার ব্যাপারে আদালতের কোন আদেশ দেখাতে পারেননি। আমরা উনাকে তাঁকে কাজ বন্ধের জন্য অনুরোধ করলেও তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। এখন কাজ চলছে। ১২টি বাড়ির কাজ চলছে সেখানে। কিছু বাড়ির প্রাচীর অনেকটাই উঁচু হয়ে গেছে। এসব বাড়িতে যারা বসবাস করবে তারা নিজেরাও চলাচলের ভাল পথ পাবে না। আবার মাঠের প্রায় ৫০০ কৃষকের ফসল ঘরে তোলার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তারা চরম বিপাকে পড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের কাছে কৃষকদের পক্ষ থেকে আবার লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি। আদালতের আদেশ অমান্য করে পুনরায় গৃহ নির্মাণ করায় আইনী সহায়তার জন্য দামকুড়া গিয়েছিলেন কৃষকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, ইউএনও’র বিরুদ্ধে কোন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়া যাবে না। কৃষকেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা আইনের মাধ্যমেই এর সমাধান চান। এ জন্য কাজে বাধা দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় কৃষক গিয়াস উদ্দিন, মাসদার আলী, আবদুস সালাম, আবদুল গফুর, আবুল কালাম, গোলাম কবিরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে ইউএনও লসমি চাকমা বলেন, ‘কোন বিষয়টা এখন মনে পড়ছে না। অফিসে এলে জানাতে পারব।’ তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার বলেন, ‘ভূমিহীনদের জন্য যে গৃহ প্রদান কার্যক্রম, ওটারই অংশ এটা। জমিটা এখনও সরকারের নামে, খাস খতিয়ানভুক্ত। ক্রাইটেরিয়া মেইনটেইন করে কাজটা শুরু করা হয়েছে।’ জমির রকম বদলে দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অসুবিধা নেই।’ কবে শ্রেণি বদল করা হয়েছে তা তিনি জানাননি।

স/আর