পদ্মা সেতু : কর্মযজ্ঞে সংযোজন হচ্ছে বড় দুটি ধাপ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে পদ্মা বহুমুখী মেগা প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এই কর্মযজ্ঞে সংযোজন হতে যাচ্ছে বড় দুটি কার্যক্রম। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের মূল পাইল স্থাপন এবং সেতুর সংযোগ সড়কের কাজও শুরু হয়েছে সোমবার সকাল থেকে। বিকেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রেল সংযোগ প্রকল্পের চুক্তি।

পদ্মাপাড় সরেজমিন পরিদর্শন, সাইট অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং প্রধান তদারকি প্রতিষ্ঠান সেতু ভবনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এরই মধ্যে ৩৭ নম্বর পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারবাহী চীনের জাহাজটি চাঁদপুর হয়ে মাওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে। স্ট্রাকচার গ্রহণে মাওয়ায় যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সেতুর সংযোগ সড়ক চার লেনের নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। শুরু হচ্ছে শ্রীনগরের ছনবাড়ি থেকে মুক্তারপুর হয়ে মদনপুর পর্যন্ত চার লেনের কাজ। রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেল ৪টায় রেল ভবনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের চুক্তি। সব মিলিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সৃষ্টিযজ্ঞ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে।

তীরের ভায়াডাক্টের মূল পাইল স্থাপন শুরু : জাজিরা প্রান্তের (তীরের) ২২ নম্বর ভায়াডাক্ট পিলারের ১০টি পাইল স্থাপন শুরু হয়েছে আজ সকাল থেকে। এই মূল পাইল স্থাপনের জন্য হ্যামারের প্রয়োজন হচ্ছে না। এগুলো কংক্রিটের পাইল। সাধারণত দেশের অন্যান্য সেতুর ভায়াডাক্টের পাইল ৪০ মিটারের বেশি নয়। কিন্তু এখানে মাটির বৈচিত্র্যের কারণে আরো বেশি গভীর করা হয়েছে।

নকশা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর দুই তীরে ৩৬৫টি ভায়াডাক্টের পিলার স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। তবে আপাতত ২৮০টি পিলার স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ৮৫টি পিলার স্থাপন হবে রেললাইন স্থাপনের সঙ্গে। এই ২৮০ পিলারের ১৮৭টিই জাজিরা প্রান্তে। ৯৩টি মাওয়া প্রান্তে।

এরই মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাজিরা প্রান্তে ২৪টি ভায়াডাক্ট পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিয়েছে। এর পরই এই পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোরও রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

৩৭ নম্বর পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত : প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত ৩১ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৭ নম্বর পিলারের নকশা জমা দেয়। এরই মধ্যে পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

রিভিউ ডিজাইনে পাইলের গভীরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই পাইলের দৈর্ঘ্য এখন ১২৮ দশমিক ৫ মিটার। এই পিলারের ৭০ মিটার গভীরতায় তিনটি করে বটম পাইল স্থাপন করা রয়েছে। টপ পাইল স্থাপনের সময়ও বাকি অংশ পূরণ করা হবে।

একই সঙ্গে বাকি তিনটি পাইলও স্থাপন করা হবে। বটম ও টপ মিলেই পাইলের গভীরতা হবে ১২৮ দশমিক ৫ মিটার। প্রাথমিক ডিজাইনে এর গভীরতা ছিল ১২০ মিটার।

একইভাবে টেস্ট পাইলের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ দলের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য পিলারেরও গভীরতা বেড়েছে, দু-একটি ক্ষেত্রে কমছে। বাকি পিলারগুলোর রিভিউ ডিজাইনের কাজ চলছে এবং পর্যায়ক্রমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো হবে।

এ পর্যন্ত জাজিরা প্রান্তে ১৮টি এবং মাওয়া প্রান্তে ছয়টি পাইলের বটম অংশ স্থাপন করা হয়েছে। আর জাজিরা অংশের ছয়টি পিলারে ১৮টি পাইলের বটম অংশ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই এখন পাইল পরিপূর্ণ করার কাজ চলছে।

মাওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে সেতুর স্ট্রাকচারবাহী চীনা জাহাজ : প্রকল্পের সাইট অফিস সূত্র জানিয়েছে, মাওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারবাহী চীনা জাহাজ। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে এটি মেঘনার চাঁদপুর অংশে বিলম্বে নোঙর করে। স্রোতের গতি কিছুটা কমায় এটি সকালে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই জাহাজে চীনে তৈরি হওয়া এক স্প্যান পরিমাণ (১৫০ মিটার) সুপার স্ট্রাকচার রয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করে রাখা বিশাল ওয়ার্কশপে তোলা হবে এই চালান। এখানেই এটি ফিটিং করা হবে।

সেতুর পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সুপার স্ট্রাকচারে রয়েছে গার্ডারসহ দ্বিতল স্টিলের সেতু। যেটির নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন এবং ওপরে অন্য যানবাহন। পুরোটাই স্টিলের। এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দুই পিলারের মাঝেই বসিয়ে দেওয়া হবে সুপার স্ট্রাকচারটি। ওয়ার্কশপ থেকে ক্রেনে করে জাহাজে সরাসরি নেওয়া হবে পিলারের কাছে।

পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান (অংশ) থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবিলায় বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুর ভার বহন করার জন্য থাকবে ৪২টি পিলার। যার প্রতিটির নিচে থাকবে ৬টি পাইল।

ঢাকা-মাওয়া চার লেন মহাসড়ক : পদ্মা সেতুর মতোই ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়কের। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।

মোট ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। মূলত পদ্মা সেতুর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ সহজ করতে এই মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের চুক্তি বিকেলে : সেতু প্রকল্পে রেল সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে এ সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের পাশাপাশি রেল চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক এস কে চক্রবর্তী রোববার বিকেলে রাইজিংবিডিকে বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেলপথের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে চীনের কোম্পানি ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড’। আগামীকাল (সোমবার) রেল ভবনের যমুনায় এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

তিনি জানান, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার ৫৮৮ দশমিক ২৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষ দিকে এ প্রকল্পে রেললাইনের কাজ শুরু হবে।

প্রকল্প অনুযায়ী ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারিত হবে। এরপর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬১ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা হবে।

 

সূত্র: রাইজিংবিডি