পদ্মায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর উপজেলার সদর মাছ বাজারে ইলিশ কেনা বেচার ধুম পড়েছে। ডালায় ইলিশ সাজিয়ে চির চেনা রূপে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এ মাছ বাজার। মঙ্গলবার সকালে মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি মাছের ডালায় শোভা পাচ্ছে নানা আকৃতির রুপালি ইলিশ। শুধু বাজারেই নয় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন খেয়া ঘাট এলাকায়। এমনি কি বাড়ীতে বাড়ীতে পৌছে যাচ্ছে ইলিশ।
শুধু ইলিশ বললে ভূলই হবে হঠাৎ করে এই বছর পদ্ম নদীতে সর্বনিন্ম ৫ কেজি ওজন হতে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের পাঙ্গাস ও বাঘাইর মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।
২২ দিন অপেক্ষার পর পাঙ্গাস, বাঘাইর ও মাছের রাজা ইলিশ কেনার জন্য বাজারে ইলিশ প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ৭০০ গ্রাম হতে প্রায় ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০/৫০০ টাকায়। এক কেজির নীচে ৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ জাটকা বিক্রী হচ্ছে ৯০- ১২০ টাকা কেজি দরে, ৪০০-৪৫০ গ্রাজ ওজনের ২০০-২৫০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ২৮০-৩৫০ টাকা কেজি দরে ।গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মাদারপুর গ্রামের মৎস্যজীবি মনিরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি প্রায় ৩৭-৩৮ বছর হতে এই ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি এই ৩৮ বছর সময়ে এত ইলিশ চোখে দেখিনি মনে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘২২ দিন মাছ মারি নাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্ট করেছি। এখন মাছ ধরায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই আজ প্রচুর মাছ পাইছি।’ একই এলাকার জেলে বাবুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে তাদের জালে এখন প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় মাছ বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

তিনি বলেন এই মৌসুমে, একেক জেলে সর্বনিন্ম ১ লক্ষ হতে প্রায় ২ লক্ষ টাকা আয় করেছেন শুধু ইলিশ বিক্রয় করে। এই সময়ে পদ্মায় অনেক মাছ ও মাছের দাম পেয়েও বেজায় খুশি জেলেরা।
এবার বেশী ইলিশ মাছ হবার কারন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলেরা বলেন, সরকার ইলিশের প্রজনন সময়ে মাছ ধরার যে নিষেধাক্কা করেছিলো এটিই সবচেয়ে কাজে দিয়েছে যার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি।
বাঘাইর ও পাঙ্গাস হবার কারন প্রসঙ্গে বলেন, এবার পদ্মানদীতে পানি ছিলো অনেক, পানির গভীরতার জন্য এসব মাছ এই অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে এসেছে তাই এসব মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে পাওয়া যাচ্ছে। সারারাত দিন কর্ডের ফাঁস জাল দিয়ে এসব মাছে পাওয়া যাচ্ছে বলে জেলেরা জানান।
মনিরুল ইসলাম জেলে জানান, এবার একেক জেলে ২মন হতে আড়াই মন পর্যন্ত মেরেছে। পাঙ্গাস ও বাঘাইর মাছ ৫ কেজি হতে ২৫ কেছি ওজনের ধরতে পেরেছে।
রেল বাজারের মাছের আড়ৎদার মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে পদ্মার ইলিশে ভরপুর থাকে মাছ বাজার নিষেধাজ্ঞার পর গত দু’দিনে প্রচুর ইলিশ মাছ উঠছে ক্রেতাদের ভীর সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। গত দুইদিনে এই বাজারে প্রায় দেড়শো হতে ২ শত মন ইলিশ আমদানি হয়েছে। এখানকার একেক আড়ৎদার সর্বনিন্ম ২ লক্ষ হতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার কেনা বেচা করেছে। ক্রেতা বিক্রেতা মাছের আমদানি ও দাম দরে দুই জনই খুশি । জেলে শফিক জানান আমরা মাছের দাম পেয়ে বেজায় খুশি এমন মাছ পদ্মায় আমরা দেখিনি । আমার বাপ দাদারা এমন মাছ মারার গল্প শুনেছি আজ আমরা বহুদিন পর এমন আনন্দে মাছ মারতে পারলাম।

এদিকে মাছের প্রচুর আমদানিতে বরফ মিল গুলো বরফ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। মাঝের আমদানি মোতাবেক বরফ না দিতে পারায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছে সেজন্য মাছ অনেক নষ্টও হচ্ছে। বরফের ওভাবে অনেক জেলে সংরক্ষন না রেখে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গায় কল করে মাছ বিক্রি করছে। তারপর সেই মাছ বাড়ীতে পৌছে যাচ্ছে।

আবার এই সুযোগে অনেকেই মেয়ে জামায়ের বাড়ীতে ইলিশ চলে যাচ্ছে প্রতিদিন। সব মিলিয়ে গোদাগাড়ীর পদ্মা পাড়ের প্রতিটি বাড়ীতে ইলিশ উৎসবে মেতেছে। এমন কারো বাড়ী নেই যে ফ্রিজে ইলিশ মাছ সংরক্ষন করা হয়নি।

গোদাগাড়ী সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামসুল করিম বলেন, ১ অক্টোবর হতে ২২ অক্টোবর মা ইলিশ ধরার যে নিষেধাক্কা ছিলো তা অনেকটাই কাজে দিয়েছে এজন্য গোদাগাড়ীর পদ্মার বুকে এতো ইলিশ মাঝের আর্বিরভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নদীতে কোন নিষেধাক্কা না থাকাই জেলেরা ইচ্ছে মতো মাছ ধরতে পারছে। আর দেশের দক্ষিণ অঞ্চল হতে ইলিশ মাছ এদিকে আসে সেই দিকেও কোস্ট গার্ড হতে শুরু করে প্রশাসন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ না ধরতে দেওয়ার কারনে এত বেশী ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

পাঙ্গাস ও বাঘাইর মাছ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর রেলবাজার হতে সুতানগঞ্জ পর্যন্ত মাটিতে কঙ্গর জাতীয় খাবারের প্রাচুর্যতা থাকাই এসব মাঝের দেখা মিলছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদ নেওয়াজ বলেন, এ বছর মা-ইলিশ রক্ষায় নদীতে অব্যাহতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেলেদের জেল-জরিমানা করার পাশাপাশি কারেন্টজাল পুড়িয়ে ফেলায় অবৈধ মৎস্য শিকারিরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারে নাই। দুদিন হলো নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে, তবে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

স/আ