পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে বাঘার ১১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘার পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরের ৪ সপ্তাহ যাবত প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্ধী রয়েছে। ফলে ১১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়া-লেখা অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। কোন ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, পূর্ব চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, পূর্ব চকরাজাপুর এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়। চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এই দুটি উচ্চবিদ্যালয়। এই প্রতিষ্টানগুলোর বন্ধ রাখা হয়েছে মর্মে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী জানান।

 
শনিবার (২৭ আগষ্ট) চৌমাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র তরিকুল ইসলাম জানায়, প্রায় চার সপ্তাহ যাবত তারা পানির মধ্যে বাস করছে। এর মধ্যে কি করে স্কুলে যাব। তাই স্যারেরা স্কুল ছুটি দিয়েছে।

 
একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী সুমির বাবা আঞ্জু মোল্লা বলেন, এর মধ্যে কি করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাব। আমরাই আতংকে আছি। ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছিনা। ঘরের মধ্যে মাচা করে বসবাস করছি।

 
চোমাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বলেন, বিদ্যালয় ছুটি দেয়া হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রধানদের নিয়মিত যেতে হচ্ছে। নিয়মিত শিক্ষা অফিসে যাচ্ছি। এরমধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা কষ্টে করে নেয়া হয়েছে।

22 copy
এছাড়া এই বিদ্যালয়ে ১০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনে উপস্থিত কম ছিল। পদ্মায় ক্রমাগত পানি বৃদ্ধিতে পাচ্ছে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ।

 
ভাঙন ও বন্যার কবলে পড়েছেন চরের পলাশি ফতেপুর, চকরাজাপুর, খায়েরহাট, মর্শিদপুর, নারায়নপুর, মিস্ত্রিপাড়া, জোতাশি, লক্ষিনগর, পাকুড়িয়া গ্রাম, পানিকামড়া, আলাইপুর, গঙ্গারামপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া এলাকা। বন্যার ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ঘর-বাড়িসহ কয়েক হাজার আবাদি-অনাবাদি জমি ও গাছপালা। ভিটে-মাটি হারিয়ে পথে বসেছে শত শত পরিবার। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

 
পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪ বার সামান্য কিছু করে ত্রাণ হিসেবে মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম দিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে চরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছেনা। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি বুঝে পরিচালনা কমিটি সিন্ধান্ত নিবেন। দূর্দশার মধ্যে চরের মানুষ বসবাস করছে। তাদের জন্য ৩০ জুলাই থেকে ২৮ আগষ্ঠ পর্যন্ত চারবার চাহিদার তুলনায় কম ত্রাণ হিসেবে নগদ টাকা, চাল, ডাল, মুড়ি, দিয়াশসালাই, স্যালাইন, চিনি, গুড়, মোমবাতি দেয়া হয়েছে। তাই তিনি সমাজের সুহৃদ ব্যক্তিদের কাছে চরের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান। তবে দুইদিন থেকে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার উপক্রম।

স/শ