পদ্মাপাড়ে শুধু বিনোদনই নয়, হচ্ছে কর্মসংস্থানও

রাজশাহীর পদ্মা পাড় এলাকায় এভাবেই ফলের পসরা নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা।                  ছবি : মুনতাসীর মারুফ

হালিমা আকতার :
রাজশাহী শহরে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম লালন শাহ পার্ক (মুক্তমঞ্চ)। রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়ায় অবস্থিত এ বিনোদন কেন্দ্রের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের ভাসমান দোকানপাট। মুক্তমঞ্চ থেকে পদ্মার পাড়ের দিকে যতদুর যাওয়া যায়, দৃষ্টি ননন্দন পদ্মাপাড়ের সাথে দুইপাশে সারি সারি দোকানপাঠের ভীড় চোখে পড়ে।

কেউ দিয়েছে ফুলের দোকান আবার কেউ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। রয়েছে ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান ও অভিযাত ফাস্টফুটের দোকনও। এসব দোকান একদিকে যেমন বিনোদন প্রেমিদের খোরাক মেটাচ্ছে, অন্য দিকে কর্মের একটা ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে ছোটখাটো দোকানপাট বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েকশ’ পরিবার। কোথাও যখন জীবিকার খোঁজ মিলেনি, তখন ভাসমান এই দোকানের উপর ভর করেই বেঁচে আছে এইসব সাধারণ আয়ের মানুষ।

রাজশাহীর পদ্মা পাড় থেকে ছবিটি তুলেছেন মুনতাসীর মারুফ
রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে বিনোদনের সাথে শিশুদের নানা পণ্য নিয়ে বসেছে ক্রেতারা।                              ছবি : মুনতাসীর মারুফ

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে এই পার্কটি স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে এখানে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমতে শুরু হয়। যার ফলে এইখানে বিভিন্ন ভাসমান দোকানের সংখ্যা ও বাড়তে থাকে। এখন এইখানে প্রায় অর্ধশতকের বেশি দোকানপাঠ রয়েছে। বেলা গড়াতেই দোকানগুলো খোলা শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এইসব দোকানে কাজ করে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। বেলা যত বাড়তে থাকে মানুষের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। সেই সাথে চলে বেচাকেনা। সপ্তাহের প্রতি দিনই এসব দোকানগুলো খোলা থাকতে। বিশেষ করে বিকেল ৪ টা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়।

ভ্রমণপিপাসু নিজেদের ভ্রমনের সাথে পছন্দের খাবার ও উপভোগ করতে পারে এই সব দোকান থেকে। ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম, ঝালমুড়ি কিংবা বিভিন্ন ফল পেয়ারামাখা থেকে শুরু করে ভিন্ন স্বাদের খাবার বিক্রি করে থাকে। নারীদের ঘরসজ্জার ও নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস ও পাওয়া যায় এইসব দোকানে। জীবিকার তাগিদে গড়ে ওটা এইসব দোকান থেকেই চলছে কয়েকশো পরিবার।

এমনি একজন হলেন মো.আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার কর্মজীবন শুরু হয়েছে এই দোকান দিয়ে। আমি প্রায় ৩০ বছর থেকে এইখানে দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি। প্রথমে শুধু পেয়ারামাখা বিক্রি করতাম এখন পেয়ারা, আমড়া, চালতা এইসব ও বিক্রি করি। এই দোকান থেকেই আমার পরিবার চালায়। অন্য দিকে নারী বিক্রেতা মিলা বেগম বলেন, আগে মেসে অল্প বেতনের কাজ করতাম। সেইটা দিয়ে ৫ জনের পরিবার চলতো না। অন্য কোনো জীবিকা খুজে না পেয়ে এইখানে দোকান দিয়েছি। প্রতিদিন প্রায় ভালোই বেচাকেনা করি। এখন এই দোকান থেকেই পরিবারের সব কিছু চলে ।

শহরের অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে আসা মানুষের কাছে ফুল, ফল, খাবার বিক্রি করেই টিকে আছে এই সব ভাসমান দোকানের মানুষের জীবন। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছে এইসব দোকানে জীবিকা করে। এইসব দোকান যেমন বিনোদনপ্রেমীদের মুখরোচক খাবার দিয়ে আনন্দ দেয় তেমনি নিজেরা ও জীবনের চাহিদা গুলো পূরণ করতে পারে।