পদে পদে হেনস্তার শিকার করোনা আক্রান্ত শিক্ষিকা

বাবা দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে করেছেন যুদ্ধ। সেই মুক্তিযোদ্ধার  মেয়ে একটি মানবিক ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের আশায় বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতার পেশা। কিন্তু তার জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে এলাকাবাসী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন নিজ এলাকায় সামাজিকভাবে পদে পদে চরম হেনস্তার শিকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন ওই শিক্ষিকা।

নিজের বর্তমান অবস্থাকে ‘চিড়িয়াখানার জীবের’ সঙ্গে তুলনা করে প্রতিবেশীসহ আত্মীয়-স্বজনদের সমালোচনা বন্ধে সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে।

ফোনে ওই শিক্ষিকা জানান, তিনি একজন পর্দাশীল নারী। ঘোড়াঘাটের একটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। চাকরির সুবাদে তিন মাসের এক কন্যা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকেন। সেখানে মাসহ থাকেন মেজ বোন এবং একজন গৃহপরিচারিকা।   তার স্বামী ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি কারখানার প্রকৌশলী। ৫ মার্চ ওই শিক্ষিকার স্বামী তাদের কাছে আসেন। ওই শিক্ষিকার মামাতো ভাই এবং ভাবি ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক।

সচেতনভাবেই ওই শিক্ষিকা এবং তার স্বামীর নমুনা তিনি চিকিৎসকদের জানান।

তিনি বলেন, হেনস্তার শুরু সেখান থেকেই। ২৫ মার্চ  চিকিৎসকরা নমুনা সংগ্রহের জন্য বাড়ির বাইরে তাদের বসান। এ সময় আশপাশের লোকজন ইচ্ছেমতো ছবি তোলেন। তারা এ ঘটনা ফেসবুকে লাইভও করেন। এরপর তা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সেই মুহূর্তে নিজেদের ‘চিড়িয়াখানার জীব’ মনে হচ্ছিল বলে ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন ওই শিক্ষিকা।

তিনি আরো জানান, নমুনা সংগ্রহের পর বাড়িতে প্রশাসনের দেওয়া লাল পতাকা যেন তাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। সেই লাল পতাকা দেখিয়ে প্রতিবেশীরা শিক্ষিকার বাড়িটিকে ভূতের বাড়ি বলে অভিহিত করতে থাকে। আশপাশে প্রতিনিয়ত বসতে থাকে সমালোচনার আসর। সর্বশেষ বুধবার ওই শিক্ষিকার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসলে এলাকায় প্রতিবেশীসহ আত্মীয়-স্বজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই শিক্ষিকা ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করতে থাকে।

তিনি জানান, তবে যারা এসব সমালোচনা করছেন তারা সমাজের কোনো অশিক্ষিত কেউ নয়। শিক্ষিত হিসেবেই পরিচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর নেওয়াজ জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী ফাঁকা স্থানেই নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। তবে যারা এ সুযোগে ওই নমুনা সংগ্রহের ছবি বা ভিডিও করেছে তা অপরাধ।

সহকারী পুলিশ সুপার মো. আখিউল ইসলাম জানান, যারা বেআইনিভাবে ওই শিক্ষিকার ছবি তুলে, ভিডিও করে ফেইসবুকে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসুস্থ একজন শিক্ষিকাকে নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, সামাজিকভাবে হেনস্তা করছেন তারা বিকৃত মানসিকতার। এটি সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র। সঠিক পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাবে এমনটি ঘটছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ওয়াহিদা খানম জানান, কোনো করোনা রোগীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার কারো নেই।

তিনি ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর