নোট বাতিলের জেরে কলকাতা মিছিল নগরী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

নিজের মিছিল নগরী নামকরণ আজ সার্থক করবে কলকাতা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। সপ্তাহে প্রথম কাজের দিনে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মিছিলে অবরুদ্ধ হতে চলেছে মহানগর। বিশেষ করে মধ্য কলকাতা, যা কিনা সরকারি ও বেসরকারি অফিস, বাণিজ্যকেন্দ্র এবং বড় বড় বাস টার্মিনালের প্রাণভোমরা। শহরে কাজ-কারবারের প্রধান জায়গাই অচল হয়ে যাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, যে সময়টায় কাজ হয় সব চেয়ে বেশি।

যেসব মিছিলের জন্য কাজে বেরোনো সাধারণ মানুষ সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই দুর্ভোগে পড়বেন, সেসব মিছিল কিন্তু বেরোচ্ছে আম জনতাকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে, তাদের ভোগান্তির প্রতিবাদে!

ভোগান্তির কারণ পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস, অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেস এবং বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্রদের নেতৃত্বে সিপিএম-সব বাম দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে মিছিল নিয়ে রাজপথে নামতে চলেছে অল্প সময়ের মধ্যে। তিন পক্ষই নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির প্রতিকার চেয়ে এবং কেন্দ্রের নরেন্দ্র মদির বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদে সরব হয়ে মিছিল বার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণে তিন পক্ষকেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হচ্ছে।

এমনিতেই বাম দলগুলো ভারতজুড়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা, ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষের হেনস্থা হওয়ার প্রতিবাদে। যদিও সেই ধর্মঘটে জনজীবন স্তব্ধ হওয়া তো দূর, কোথাও এতটুকু বিঘ্ন ঘটেছে বলে খবরও নেই। শুক্রবার ধর্মঘটের ঘোষণা বামেরা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বনধ, ধর্মঘট তারা সমর্থন করেন না, তাই রাজ্য সরকার সবরকমজনজীবন সচল রাখতে উদ্যোগী হবে। আজ ধর্মঘটে সাড়া মেলেনি বলেই মৌলালি থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত মিছিলেই বামেরা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইবেন।

বেলা ১২টা নাগাদ কলেজ স্কোয়্যার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল বেরিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলা পৌঁছবে। তার পর দুপুর ২টায় দলের সদর দফতর, মৌলালির বিধান ভবন থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিল বেরিয়ে পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত যাবে।

মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মমতা কিন্তু শুধু তার রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। ইতোমধ্যেই তিনি দু’দফায় দিল্লি গিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। দিল্লিতে বসেছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবনিদ কেজরীবালকে সঙ্গে নিয়ে। পরশু, বুধবার বিহারের রাজধানী শহর পটনায় মমতার সভা করার কথা একই ইস্যুতে। ওই জনসভায় লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল সামিল হবে বলে জানিয়েছে।

নোট বাতিলের সিদ্ধা‌ন্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তার প্রতিকার চেয়ে পথে নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বা মোদিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। আপাতত, এ ক্ষেত্রে তার প্রতিবাদী কণ্ঠই সব চেয়ে জোরালো। তবে মমতার ছত্রচ্ছায় আসার ব্যাপারে অন্য বিরোধী দলগুলোর দ্বিধা রয়েছে এখনও পর্যন্ত।

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন