নুসরাতের আগে সেই অধ্যক্ষের শ্লীলতাহানির শিকার হন আরও এক ছাত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সারাদেশ।এমন নিষ্ঠুর, বর্বর, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার করতে দাবি জানাচ্ছে দেশবাসী।ঘটনার মূল আসামি মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এদিকে এমন নিষ্ঠুর, বর্বর, হত্যাকাণ্ডের পর শোক প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষোভে ফেটে পড়েছে স্থানীয়রা।

এবার সিরাজউদ্দৌলার আরেক অপকর্মের কথা ফাঁস করলেন একই মাদ্রাসার প্রভাসক আবুল কাশেম।

গণমাধ্যমে তিনি জানান, নুসরাতই প্রথম নয় এর আগে ২০১৭ সালে সিরাজউদ্দৌলার দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিল ওই মাদ্রাসারই আরেক ছাত্রী।

শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, ভুক্তোভোগীর বাবা অন্য একটি মাদ্রাসাপ্রধান। সেদিন তিনি তার মেয়েকে হেনস্তা করা হয়েছে দাবি করে অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন।

বিষয়টি সুরাহা করতে সিরাজউদ্দৌলার কাছে ভুক্তোভোগীর বাবাকে পাঠান আবুল কাশেমসহ আরও দুই শিক্ষক।এ সময় অধ্যক্ষ সিরাজ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে উল্টো ওই ব্যাক্তির ওপর চড়াও হন।

এর পর তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে এবং ওই ব্যক্তিকে এ অভিযোগ আনতে প্ররোচণা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ওই তিন শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেয় অধ্যক্ষ সিরাজ।

এরপর মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ফেনীর অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট আখতারুনন্নেসা শিউলীর কাছে ওই শোকজ নোটিশের জবাব দেন আবুল কাশেমসহ দুই শিক্ষক।

সেই প্রেক্ষিতে এ ঘটনার সত্যতা নিরীক্ষণে সোনাগাজী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়।কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির কী অগ্রগতি হয়েছিল তার কিছুই জানতে পারেননি আবুল কাশেম।

তিনি বলেন, ওই শোকজের জবাবে গঠিত তদন্তের জন্য আমাদের তিনজনের কাউকেই কখনও ডাকা হয়নি। কোনো এক অদৃশ্য কারণে বিষয়টি হারিয়ে যায়।

এর পর সিরাজউদ্দৌলার এসব অপকর্ম ও দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগগুলো এক করে পৌর কাউন্সিলর আবদুল হান্নান একটি রিপোর্ট তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেন। সে রিপোর্টও সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতার অদৃশ্য বলয়ে হারিয়ে যায়।

সিরাজউদ্দৌলার এমন ক্ষমতার বিষয়ে প্রভাসক আবুল কাশেম বলেন, যখন যিনি ক্ষমতায় থাকেন সিরাজউদ্দৌলা তার সঙ্গেই সখ্যতা গড়ে তোলেন। সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদানের আগে যেসব মাদ্রাসায় তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন সেখান থেকেও তার বিরুদ্ধে একইরকম অভিযোগ এসেছে বলে জেনেছেন আবুল কাশেম।

প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা।

শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।

তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।