সোমবার , ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নুন প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তিতে আসছে কঠোর নীতি

Paris
জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চলতি অর্থবছরে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাজেটে অপ্রতুল বরাদ্দ, এ খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থের চাহিদা এবং এমপিও প্রদানের ব্যবস্থা বা নীতি পর্যালোচনায় সম্ভাব্য (প্রস্তাবিত) কঠোর নীতির কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তবে এখন নীতিমালা ও আইন চূড়ান্ত করে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে চলতি অর্থবছর পার হয়ে যেতে পারে। নতুন অর্থবছরে অবশ্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘এমপিওভুক্তির নীতি একটি খারাপ পলিসি। আমি এর সংস্কার চাই। কিন্তু এটি হচ্ছে না। সুতরাং আমি এমপিও আটকে রেখেছি। এবারে দিব, তবে এজন্য শর্ত দেয়া হবে।’ শর্তের মধ্যে অবকাঠামো ও বিভিন্ন উপকরণ উন্নত করার বিষয়টি থাকবে- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমি এ নিয়ে একটি বৈঠক করব। …এ মাসেই হবে কিনা আমি জানি না। সেটি সচিব নির্ধারণ করবেন।’ তবে কতটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে- সে কথা অবশ্য তিনি বলেননি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এ বছর নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা এ খাতে বরাদ্দ আছে মাত্র ৩২ কোটি টাকা। চাহিদার তুলনায় এটা খুবই কম। এছাড়া নতুন এমপিও দেয়ার আগে গোটা ব্যবস্থার ওপর একটি পর্যালোচনা করতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। যে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো খসড়া নীতিমালা ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সেখানকার (অর্থ মন্ত্রণালয়) নীতি-নির্ধারকরা। নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি তাদের অনুরোধ করেছি আমাদের নীতিমালা বহাল রেখে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ এগিয়ে নিতে। তারা আমাদের প্রস্তাবিত বিষয়ে ব্যাখ্যার জন্য একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দিতে বলেছেন। তাও দেয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এবার শিক্ষা এবং অর্থ উভয় মন্ত্রণালয় ব্যাপক যাচাই-বাছাই করতে চায়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান নীতিমালা মেনে প্রতিষ্ঠিত কিনা, শিক্ষক নিয়োগ ঠিকমতো হয়েছে কিনা, প্রতিষ্ঠান অনুমোদনকালে কোন ধরনের শর্ত মেনে নিয়েছিল- ইত্যাদি অন্যতম। এরসঙ্গে যুক্ত হবে বিদ্যমান এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী ও পাসের হার আছে কিনা।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর (ডিটিই) এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) বিভিন্ন পরিদর্শনে প্রমাণ পাওয়া গেছে, শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থী কম- এমন প্রতিষ্ঠান ভূরি ভূরি। আকস্মিক পরিদর্শনেও এমন দৃশ্য হাতেনাতে ধরেছেন বলে অসংখ্যবার বিভিন্ন সভায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ৭ জানুয়ারি নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনিও যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি জানিয়ে দেন তাদের।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিও কঠোর অবস্থানে বলে জানা গেছে। কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমিন বলেন, তিনটি বিষয় নিশ্চিত করেই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। এগুলো হচ্ছে, বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে কিনা এবং অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

উল্লেখ্য, গোটা এমপিও ব্যবস্থা পর্যালোচনার ব্যাপারে খোদ অর্থমন্ত্রীও বহুদিন ধরে বলে এসেছেন। এ বিষয়টি তিনি সংসদের বক্তৃতায়ও উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, (এমপিওভুক্তিতে সংস্কারের ব্যাপারে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু আমি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলাম। শিক্ষকদের দাবি অযৌক্তিক। কারণ সরকারের সেই সক্ষমতা নেই। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন এমপিওভুক্তি আমি আটকে রেখেছি। কারণ এতে শুধু শিক্ষকরা উপকৃত হবে। আপনারা অনুসরণ করেন, শিক্ষকরা বেতন পাবে কিন্তু স্কুল আছে কিনা সেটি দেখেন। একটি ঘরের মধ্যে ৫টি শ্রেণী দিয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কোনোটাই মাথায় ঢুকছে না। ক্লাসরুম অন্ততপক্ষে গাছের নিচে হলেও আলাদা আলাদা হওয়া উচিত।’ এর আগে গত সপ্তাহে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, এমপিওভুক্তি সম্পর্কে সরকারের এখন পর্যন্ত চিন্তাভাবনা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই শেষে এমপিও দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি কাজ করছে।

সূত্র জানিয়েছে, উল্লিখিত পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখন পর্যন্ত চিন্তাভাবনা হচ্ছে- যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক আছে ছাত্র নেই, সেগুলোকে পার্শ^বর্তী প্রতিষ্ঠানের যেখানে শিক্ষার্থী বেশি সেগুলোর সঙ্গে একীভূত করে দেয়া।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘তবে এমন চিন্তা বিদ্যমান নীতিমালায় বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আইন প্রণয়ন জরুরি। শিক্ষা আইনে এমপিও’র দিকটি গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে কারণে আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্তির কাজটি ঝুলে থাকতে পারে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু এমপিওর দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাই কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে দ্বার উন্মোচন করে দেয়ার পদক্ষেপও নেয়া হতে পারে। এসব কাজ করতে গিয়েই বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও মূল্যায়ন করা হবে। সে ক্ষেত্রে কাজটি বিলম্বিত হতে পারে।’

দুশ্চিন্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে : বর্তমানে সারা দেশে ১০ হাজার ১৪৪টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়। ২০১০ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী যদি এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (সরকারি বেতন) দিতে হয় তাহলে বছরে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৩ হাজার ১৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অপরদিকে বর্তমানে এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে এ খাতে বর্তমানের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি ব্যয় বেড়ে যাবে। এখন সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নেবে কিনা- সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খোদ নীতি-নির্ধারকেরাই সন্দিহান।

উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে নতুন এমপিওভুক্তি নিয়ে শুধু সংশয়ই নয়, দুশ্চিন্তায়ও আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করে একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠান এমপিওবিহীন আছে তার সব যেমন এমপিওভুক্ত করা সম্ভব নয়। তেমনি বিদ্যমান এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোনোটি বাদ দিলে বা অন্য ব্যবস্থা নিলে আন্দোলনের পাশাপাশি মামলার কবলে পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তখন এমপিওবিহীন ও বাদপড়ারা মিলে আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনাধীন এমপিও নীতিমালায় ইতিবাচক দিকও আছে। সেটি হচ্ছে, বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন লাভবান হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এমপিওভুক্তি ব্যয় বেড়ে যাবে। সারা দেশে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩টি নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। তবে নেতিবাচক দিক হচ্ছে, বিদ্যমান নীতিমালায় কারিগরি (বিএম) প্রতিষ্ঠানের সহকারী লাইব্রেরিয়ান এমপিওভুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। অথচ ২০১০ সালের আগে সহকারী লাইব্রেরিয়ানদের এমপিওভুক্ত করার বিধান ছিল।

বিদ্যমান নীতিমালায় সেটা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৩ শতাধিক সহকারী লাইব্রেরিয়ান। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নীতিমালায় শুধু সহকারী লাইব্রেরিয়ানই নয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠানই নেই। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ৯০টি। এ খাতে বরাদ্দ আছে ১৪ হাজার ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২২ হাজার ৪০৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ৬৩ শতাংশের বেশি অর্থই বরাদ্দ হচ্ছে এ খাতে। যুগান্তর

সর্বশেষ - শিক্ষা