নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শেষবেলায় নিয়োগ দিতে মরিয়া রাবির ভিসি

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (০৬ মে)। গত বছরের পুরোটা জুড়ে দুর্নীতি, নিয়োগ নিয়ে অনিয়মসহ নানা বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই ভিসি তাঁর মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসেও এডহকে নিয়োগ দিতে মরিয়া। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার পরেও পছন্দের প্রার্থীদের এডহকে নিয়োগ দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এমনটাই অভিযোগ ক্যাম্পাসের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভিসি কেন নিয়োগ দিতে মরিয়া এখন তা নিয়েই বিভিন্ন মহলে উঠছে প্রশ্ন।

দুর্নীতিবিরোধী এসব শিক্ষকদের দাবি, কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ভিসি এডহকে নিয়োগ দিতে চাইছেন। এমনকি এসব নিয়োগে অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টিও জড়িত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক সোবহান ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বারের মত নিয়োগ পান। আগামী বৃহস্পতিবার ৬ মে তার মেয়াদ শেষ হবে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের বেশ কিছুদিন পর তার বিরুদ্ধে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য প্রদান, স্বজনপ্রীতিসহ বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩শ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেয় দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা। অভিযোগ তদন্তে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতাও পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এরই প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখাসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রাবি ভিসিকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নিষেধাজ্ঞার পরেও শেষ মুহূর্তে সেকশন অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে অন্তত ১শ জনকে গোপনে নিয়োগ দিতে ভিসি চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে ভিসির দায়িত্বে এসে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন অধ্যাপক সোবহান। নিয়মের বাইরে গিয়ে সে সময় ৩৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন তিনি। যার মধ্যে অস্থায়ীভাবে ৯৫জন এবং ৭জন এডহকে। এছাড়াও ৩৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ দেন তিনি।

দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা জানান, প্রথম মেয়াদে ভিসি অধ্যাপক সোবহানের দেয়া নিয়োগগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। ওই নিয়োগগুলোতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসেও তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ-স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তারা সংশ্লিষ্টদের কাছে বর্তমান প্রশাসনের দ্রুত অপসারণের দাবি করেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরেও কেন তাকে নিয়োগ দিতেই হবে? তিনি কি কোনো কারণে দায়বদ্ধ? মূলত ব্যক্তিগত প্রত্যাশা পূরণ ও লাভবান হওয়ার জন্যই শেষ মুহূর্তেও ভিসি নিয়োগ দিতে তৎপর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, মেয়াদের শেষ সময়ের সকল অবৈধ কাজ ও দুর্নীতিকে দাপ্তরিকভাবে বৈধতাদানের চেষ্টা করছেন। গত রবিবার (০২ মে) তিনি নিজ বাসভবনে ফাইন্যান্স কমিটির সভা ডেকেছিলেন। কিন্তু সেই সভা তারা করতে পারেননি। এছাড়াও আগামীকাল (আজ) সিন্ডিকেট মিটিং রয়েছে। হয়ত তিনি সিন্ডিকেট মিটিংএ এডহক নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, গত রবিবার (০২ মে) সকালে ফাইন্যান্স কমিটির মিটিং শুরুর আগে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা ভিসির বাসভবন, প্রশাসন ও সিনেট ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে ফাইন্যান্স কমিটির সভা আর করতে পারেননি ভিসি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদের শেষ সময়ে যেন তিনি অতীতের মতো আর দুর্নীতি করতে না পারেন সে জন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি।

এসব বিষয়ে জানতে ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মুঠোফোনে গতকাল সোমবার বিকেলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

স/আর