রাজশাহীতে বাড়ছে শিশু নির্যাতন: কৌশল হচ্ছে মোবাইল চুরির অপবাদ

শাহিনুল ইসলাম আশিক:
শিশুকে কখনো মানসিক আবার কখনো নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নির্যাতনকারীরা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করাছে মোবাইল চুরির অপবাদ। তারা মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে ছবি দিচ্ছে নির্যাতনকারীরা। আবার এ নির্যাতনের মামলায় কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও কয়েকদিন পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে চলে আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীরা ক্ষমতাশালী হওয়াই মামলা নিলেও তেমন তৎপরতা নেই।

 

  • গত সোমবার রাজশাহীর বাঘায় উপজেলার নারায়নপুর বাজারের মনিকা সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে মোবাইল চুরি সন্দেহে এক স্কুল ছাত্রকে পাঁ বেঁধে একটি দোকান ঘরের কাঠের তীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে বাজারের লোকজন ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে খবর পেয়ে বাঘা থানা পুলিশ ঘটনায় জড়িত জিল্লুর রহমান নামে এক পুলিশ সদস্যসহ মোটরসাইকেলসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

 

অভিযুক্ত কিন ভাই হলেন, পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান, সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর হোসনে ও ব্যবসায়ী মহিবুল আলম। জিল্লুর রহমানকে এরই মধ্যে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মনরিুলরে মা আবেদা বেগম বাদি হয়ে মামলা করেন।

 

জানা গেছে, উপজেলার চকছাতারি গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন মেম্বর হারান আলীর ছেলে ব্যবসায়ী মহিবুল আলম নারায়নপুর বাজারে মাছ বাজারে ঘোরাফেরা করছিল। এসময় তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল খোয়া যায়। সেখানে ছিল কয়েকজন যুবক।

  • পরে চকনারায়নপুর গ্রামের মিঠু প্রামানিকের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মনিরুল ইসলামকে (১৩) মোবাইল চোর সন্দেহে মহিবুল ইসলামসহ তার সহোদর ভাই সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন ও অপর ভাই পুলিশ সদস্য হাফিজুর রহমান জিল্লুর এই ছাত্রকে মোটরসাইকেল করে তুলে নারায়নপুর বাজারে মনিকা সিনেমা হলের সামনে মোবাইল ও ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী আনারুলের দোকানের সামনে নিয়ে যায়।

 

সেখানে দুই পাঁ বেঁধে দোকানের কাঠের তীরের সঙ্গে ওপরে পা ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। মনিরুলের মা আবেদা বেগমের দাবি তার ছেলে মোবাইল চুরি করতে পারে না। বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহীতে দড়ি দিয়ে বেঁধে দুই শিশুকে ১০-১২ জন মিলে লাঠিপেটা করে। নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়। জেলার পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকায় মোবাইল চুরির অপবাদে এ নির্যাতন চালানো হয়। রাতে নির্যাতকদের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

নির্যাতনের শিকার দুই শিশু হলো জাহিদ হাসান (১৫) ও ইমন আলী (১৩)। জাহিদ হাসান পবার চৌবাড়িয়া এলাকার ইমরানের ছেলে ও বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিল ছাত্র। ইমনের বাবা মৃত মাসুদ রানা। এ নির্যাতনের ঘটনায় সঙ্গে জড়িত ছিলেন একজন সেনা ও পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় কয়েকজন আসামিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

এদিকে, উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস) এর তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৭জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে বাঘায় ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ৩দিন ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ,  নগরীর নতুন বুধপাড়ায় নিজবাড়ি একজন মা তার শিশু কন্যাকে কুপিয়ে হত্যা করে, দূর্গাপুর দেবীপুরে প্রতিবন্ধি ১৪ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ এবং সন্তান প্রসব, নগরীতে ৭ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ। তারা এসকল তথ্য দিয়েছেন রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে।

 

এদিকে, গত ২ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল ৫টার দিকে টাকার লোভ দেখিয়ে ছয় বছরের এক স্কুলছাত্রকে নগরীর মির্জাপুর এলাকার ফাতেমা ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে মোজাফ্ফর হোসেন নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থী।

 

এ ঘটনায় এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়। নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মোজাফ্ফর নামের একজনকে পুলিশ আটক করেছে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

তার একদিন আগে বাঘা উপজেলার মিলিকবাঘা গ্রামের বানেরা বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে ৫ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসি ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করে। একই দিনে গোদাগাড়ীতে এক শিক্ষকের সঙ্গে অপর এক ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ফাঁসের অভিযোগ উঠে।

 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। উপজেলার বালিয়াঘাট্ট্রা গ্রামের আশরাফুল হকের ছেলে মো. ময়েন (৩৫) উপজেলার গুল গোফুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকতা করেন।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা ড. নীলুফার সুলতানা বলেন, সামাজি অস্থিরতা চলেছে সেটাই অন্যতম কারণ। অপরাধীরা অপরাধ করে পার পয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা মনে করছে তারা কোন অপরাধ করলে এর বিচার হবে না। তাই যেনে তারা অপরাধ করেছে।

 

তিনি আরো বলেন, মোবাইলটা একটা কমন জিনিস। এটা সবার কাছেই থাকে। তাই অপরাধীরা এই অপবাদ দিয়ে শিশুদের নির্যাতন করছে। আর কোন অপরাধী যদি বলে তার কাছে স্বর্ণের কোন জিনিস আছে তাহলে কোন মানুষ বিশ্বাস করবে না। তাই অপরাধীরা মোবাইল অপবাদ বেশি দিচ্ছি।

 

স/আ