নির্মাণের ৯ মাসেও আরডিএ ভবনে চালু হয়নি বঙ্গবন্ধু কর্ণার ২০ লাখ টাকা লোপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মুজিবর্ষ পালিত হচ্ছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি সরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণ ও চালুর নির্দেশ দেওয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে-তাও এক বছরের বেশি সময় আগে। সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও বিভিন্ন সরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্ণার চালু হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা আরডিএ।

প্রায় ৯ মাস আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও রাজশাহীর আরডিএ ভবনে এখনো চালু হয়নি বঙ্গবন্ধু কর্ণার। এ নিয়ে রাজশাহীতে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগকারীরা বলছেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সহযোগী কর্মকর্তাদের অবহেলাতেই বঙ্গবন্ধু কর্ণারটি এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর দুটি ছবি ছাড়া আর কিছুই রাখা হয়নি। অথচ এই খাতে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ^াসীদের সঙ্গে জোর উঠা-বসা রয়েছে আরডিএ চেয়ারম্যানের। ফলে তাঁর গাফিলতি ও অবহেলায় বঙ্গবন্ধু কর্ণারটি চালু না হওয়ার একমাত্র কারণ বলে রাজশাহীর সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। আরডিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের একাংশও তেমনটাই মনে করেন।


সরেজমিনে আরডিএ ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনে প্রবেশের মুখে নীচতলার বাম পাশে বঙ্গবন্ধু কর্ণার নামে একটি অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল শাখা স্পট কোটেশানের মাধ্যমে প্রায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে প্রায় ৭০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের বঙ্গবন্ধু কর্ণারটি নির্মাণ করে। সরেজমিনে গিয়ে যদিও দেখা গেছে, আগেই থাকা নীচতলার দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো কর্ণারটিতে তিনদিকে তিনটি বড় কাঁচ আর ভেতরে কয়েকটি র‌্যাক ছাড়া তেমন নতুন কিছুর নির্মাণ কাজ চোখে পড়ে না। কর্ণারের ভেতরে একটি কাঠের চেয়ার রাখা হয়েছে। ভেতরে বানানো হয়েছে কয়েকটি র‌্যাক। তবে র‌্যাকগুলিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকাণ্ড ভিত্তিক কোনো বই পুস্তক বা কোনো সহায়ক উপকরণ নেই। আর কর্ণারের ভেতরে দেওয়ালের সঙ্গে ৪২ বাই ৪৮ ইঞ্চির বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর দুটি বড় ছবি রাখা হয়েছে। ছবিগুলির ওপরও ধুলাবালি জমেছে অযত্ন অবহেলায়। মুলত: এটিকেই বঙ্গবন্ধু কর্ণার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নির্মাণের পর অধিকাংশ সময় বঙ্গবন্ধু কর্ণারটি অযত্ন অবহেলায় উন্মুক্ত অবস্থায় পড়েছিল। সম্প্রতি এর দরজায় একটি বড় তালা ঝোলানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়, কর্ণারটি গত জুনে নির্মাণের পর সেখানে ধুলা-বালি পড়ে ময়লা জমে গেছে। পরিস্কার না করায় ভেতরের চেয়ারের ওপরেও ময়লা জমেছে। নির্মাণের ৯ মাস পরও বঙ্গবন্ধু কর্ণারের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো উপকরণ রাখার উদ্যোগ নেননি বর্তমান চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর রচিত দেশি বিদেশি বই পুস্তক, জার্নাল, ম্যাগাজিন, স্থিরচিত্র, স্মৃতিচিত্র, ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারি, সিডি বা অন্য কোনো উপকরণ এই কর্ণারের জন্য সংগ্রহ করা হয়নি। স্পষ্টভাবে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বর্তমান চেয়ারম্যান কেন বঙ্গবন্ধু কর্ণার চালু করতে এমন নজিরবিহীন অবহেলা দেখিয়েছেন তা নিয়ে নানান আলোচনা চালু রয়েছে আরডিএ কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাঝে। তারা বলছেন, আসলে আরডিএর চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেনেকে ঘিরে ধরে থাকে বর্তমান সরকারের আদর্শিক চেতনার বাইরের লোকজন। ফলে তিনি শুধু কিছু রুটিন কাজ করেই সময় পার করছেন। যার কারণে বঙ্গবন্ধু কর্ণারটি চালু করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কিন্তু এর পেছনে বিপুল টাকা খরচ করা হয়েছে ঠিকই।

এদিকে বঙ্গবন্ধু কর্ণার তৈরিতে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হলেও স্থানটি পরিদর্শন করে একাধিক নির্মাণ প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করে  বলেছেন, কর্ণারটি নির্মাণে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে। বাস্তবে সেখানে নতুন কোনো অবকাঠামোই সংযোজন করা হয়নি। কিন্তু এটি করতে গিয়েই প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

জানতে চইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এখন সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করছেন। কিন্তু তার নামে মূরাল বা কোনো স্থাপনা তৈরী করতে গিয়েও যদি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন কেউ বা কারা, তাহলে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধুকে এখনো ওইসব মানুষ আদর্শিকভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে পারেনি। লোক দেখানোর জন্য কোনো স্থাপনার নামে তারা লুটপাটে মেতে ওঠে।’

জানতে চাইলে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

নির্মাণের ৯ মাস পরও কেন আরডিএ ভবনে বঙ্গবন্ধু কর্ণার চালু হয়নি জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ম্যাসেজ দেওয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।