নিরাপত্তা সরঞ্জাম কি শুধুই লোক দেখানো?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ হোটেল-মোটেল, আদালত, শপিং মল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় আর্চওয়ে গেট ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর। কিন্তু এসব নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো কি আদৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, নাকি এগুলোর ব্যবহার শুধুই লোক দেখানোর জন্য- এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কখনও সম্ভব নয়। এসব সরঞ্জাম নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপকরণ মাত্র। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোর ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর একসময় শুধু বিমানবন্দর ও কারাগারে ব্যবহার করা হতো। তবে দেশে জঙ্গি হামলা, রাজনৈতিক নাশকতা, পরিকল্পিত হামলা, ডাকাতি প্রতিরোধে এগুলোর ব্যবহার বেড়েছে। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার কারণেই এগুলোর ব্যবহার বেড়েছে।

তারা বলছেন, আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ম্যানুয়ালি ও অটোমেটিক— দু’ভাবেই কাজ করে। কোনও ব্যক্তির শরীরে ধাতববস্তু শনাক্তের জন্যই মূলত এগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু বিস্ফোরক দ্রব্য, গান পাউডার, দাহ্য পদার্থ ও তরল অ্যাসিড শনাক্ত করার সক্ষমতা নেই এসব নিরাপত্তা সঞ্জামের।

দেশের বেসরকারি সিকিউরিটি সার্ভিসের মধ্যে অন্যতম এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড বিদেশি কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) মাজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আর্চওয়ে কেবল লোহাজাতীয় বস্তু শনাক্ত করে, অন্য কিছু নয়। কারও সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সেগুলো আমরা তল্লাশি করে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বিস্ফোরক আছে, যেগুলোতে মেটাল থাকে। তা শনাক্ত হয় আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে। তবে অ্যাসিড, গান পাউডারসহ অন্যান্য বিস্ফোরক শনাক্ত করে না।’

এগুলো শনাক্তের কোনও যন্ত্র রয়েছে কিনা এবং কোনও সিকিউরিটি সার্ভিস তা ব্যবহার করে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরাই দেশের সবচেয়ে বড় সিকিউরিটি সার্ভিস। আমরা করছি না, তাহলে আর কে করবে? এরকম কোনও যন্ত্র রয়েছে কিনা, তাও আমি জানি না। আমাদের হাইকমান্ড তা জানতে পারেন। এরকম স্ক্যানিং মেশিন থাকলে হয়তো হাইকমান্ড তা নিয়ে আসবে।’

এদিকে, সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বড় বড় শপিং মলের প্রবেশ পথেই আর্চওয়ে বসানো রয়েছে। মানুষ প্রবেশ করছে, আর শব্দ হচ্ছে। শব্দ হওয়ার পরও কারও কাছ থেকে কিছুই উদ্ধার করছেন না নিরাপত্তাকর্মীরা। শব্দের উৎস সম্পর্কেও তারা জানতে চান না। নিরাপত্তাকর্মীরা ভেবেই নেন চাবি বা বেল্টের কারণে এমন শব্দ হচ্ছে। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

এই আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টর ডোর বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। কেউ কেউ একে বলছেন নিরাপত্তা বাণিজ্য। এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও ঘটনার পর নড়েচড়ে বসি। তারপর আর খবর থাকে না। বিয়ের প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি, অফিস আদালত সব জায়গায় আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দেখা যায়। অনেকেই এর কার্যক্ষমতা জানে না। শুধু এগুলো বসালেই হবে না, পাশাপাশি শরীরে তল্লাশিও নিশ্চিত করতে হবে।’

উন্নত দেশে দৃশ্যমান কোনও তল্লাশি থাকে না। তবে এক্সরে মেশিনের মধ্য দিয়ে মানুষকে প্রবেশ করতে হয়। এতে গোটা শরীর স্ক্যানিং হলেই বোঝা যায় কারও শরীরে কিছু লুকিয়ে আছে কিনা। বাংলাদেশে এমন ব্যবস্থা নেই জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে দেখা যায় কারও শরীরে পেস্ট, তরল, পাউডার জাতীয় কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে কিনা। এই ব্যবস্থা আমাদেরও নেওয়া উচিত।’

সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা যে একেবারে নিষ্ক্রিয়, তা নয়। আমাদের এখানেও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। কিছু মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে বাণিজ্য করছে। তবে এসব সরঞ্জামে নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে, তাও ভেবে দেখতে হবে।’

এত হামলা ও নাশকতার পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পাচ্ছে না। বিস্ফোরক ও মাদক শনাক্তের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ (এসবি) কেবল পৃথক দু’টি যন্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো যেভাবে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে, আমাদেরও তাই করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে আপোষ করার সুযোগ নেই।’

নিরাপত্তা সরঞ্জামের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (ইক্যুইপমেন্ট) তানভীর মমতাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেটাল ডিটেক্টরের জন্যই মূলত আর্চওয়ে গেট ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয়। বিস্ফোরক ও মাদক শনাক্তের জন্য ডিএমপি ও এসবি পৃথক দু’টি যন্ত্র ব্যবহার করছে। আরও একটি যন্ত্র কেনার প্রক্রিয়া চলছে।’

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন