‘নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী চিকিৎসকদের আক্রান্তের অন্যতম কারণ’

সিল্কসিটি ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, পিপিই সহ চিকিৎসকদের জন্য নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী তাদের আক্রান্তের অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, প্রথম দিকেই যখন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করতে গেলেন, তখন তাদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হলো না। এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হলো। দেরিতে হলেও তাদের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যে সুরক্ষা সামগ্রীগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিম্নমানের বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমি মনে করি। বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনের আলাপচারিতায় ডা. আব্দুল্লাহ এ কথা বলেন।

তিনি বলেন যে, এখন পর্যন্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী যত মারা গেছেন, তারাই হলেন পেশাদার বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই বাস্তবতায় চিকিৎসকদের সুরক্ষা করা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি মনে করেন, চিকিৎসকরা যদি এভাবে আক্রান্ত হতে থাকেন, তাহলে এক পর্যায়ে চিকিৎসা কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। চিকিৎসা দেওয়ার মতো লোক পাওয়া যাবে না। এজন্য তিনি অনতিবিলম্বে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি পৃথক হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেন।

ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিয়ে নানা রকম জটিলতা এবং বিতর্ক তৈরী হয়েছিল। এই জটিলতা, বিতর্ক কখনই কাম্য ছিল না বলে তিন মনে করেন।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে চিকিৎসকরা সুরক্ষা সামগ্রী পায়নি। ফলে চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়াই তাদের অনেককে রোগী দেখতে হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সরাসরি সংস্পর্শে আসেন একজন চিকিৎসক। এই সংস্পর্শে আসাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য তিনি যদি সুরক্ষিত না থাকেন তবে তিনি আক্রান্ত হন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে যে, আইসিইউ’তে চিকিৎসকরা বেশি মৃত্যুবরণ করছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন যে, আইসিইউ’তে একজন রোগীকে ভেন্টিলেটর দিতে হচ্ছে, নিবিড়ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে, চিকিৎসা করতে হচ্ছে। এ সময় যদি তিনি সুরক্ষিত না থাকেন, তাহলে সেই চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডা. আব্দুল্লাহ মনে করেন যে, চিকিৎসকরাও কিছু কিছু রোগ শোকে আক্রান্ত। অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত। ফলে তারা আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন।

তিনি বলেন, প্রথমত; আমাদের চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য শুরুতে যে নিম্নমানের পিপিই এবং নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল, সে রকম অভিযোগ যেন আর না ওঠে। এটা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত; যেসব চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারা যেন ভালো জায়গায় থাকেন, তাদেরকে যেন ভালো খাবার-দাবার দেওয়া হয় সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের যা যা প্রয়োজন সেটা দিতে হবে। তা না হলে চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। তাদের মনোবল ভেঙে গেলে আমাদের করোনা চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে।

ডা. আব্দুল্লাহ মনে করেন যে, আমাদের চিকিৎসকরা হলেন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। কাজেই করোনা যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসকদের সুরক্ষাটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যা যা করা দরকার, তাই করতে হবে। কারণ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষিত না হলে করোনা সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধে আমরা পেরে উঠবো না।

স/রা