নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি রোধসহ ৬ দফা দাবিতে রাজশাহীর তরুণদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধ ও অসাধু সিন্ডিকেট বন্ধে নতুন আইন প্রণয়নসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর তরুণেরা। আজ রোববার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে এ দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রাজশাহীর সহকারি কমিশনার (গোপনীয়) সুমন চৌধুরী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস, স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংগঠন ও ইচ্ছা থেকে শুরু যৌথভাবে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। এর আগে বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরীর সোনাদীঘি মোড়স্থ মনি চত্বরে (মাস্টাপাড়া কাঁচা বাজারের সামনে) এই দাবিতে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেন তারা।

ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি মোঃ শামীউল আলীম শাওন, স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংগঠন সভাপতি রুবেল হোসেন ও ইচ্ছা থেকে শুরু সভাপতি সাবরিনা শারমীন হক যৌথ স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ছয় দফা দাবিগুলো হলো:

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ কে সংস্কার করে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে তুলতে হবে; নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধের বিষয় সংস্লিষ্ট ধারা বিদ্যমান আইনে সংযোজন করতে হবে অথবা সংস্লিষ্ট বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে একই সাথে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ী এবং তথাকথিত সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অসাধু সিন্ডিকেট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে; নিয়মিত ও যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি ভেজালসহ ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে; দেশের অভ্যান্তরিন চাহিদানুযায়ী দেশে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক পণ্য আমদানি করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং একই সাথে দেশের চাহিদা পূরণ করে দেশীয় পণ্য বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিতে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়সহ সংস্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়সূমহকে সমন্বিতভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস কোষাধ্যক্ষ আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি মোঃ শামীউল আলীম শাওন। এতে বক্তব্য রাখেন, স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংগঠন সভাপতি রুবেল হোসেন ও ইচ্ছা থেকে শুরু সভাপতি সাবরিনা শারমীন হক, নারী উন্নয়ন কর্মী তহুরা খাতুন লিলি প্রমূখ। এসময় ইয়্যাসের সদস্য রিনা আক্তার, মেহরুননেসা তিথী, রবিন শেখ, স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ অমিত হাসান, সদস্য রায়হান আলী, সামিম মন্ডল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে বক্তারা বলেন, ‘চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু ও কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। এতে করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর খেটে খাওয়া দিনমজুর বা প্রান্তিক মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’

দেশের অভ্যান্তরে বিভিন্ন সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে তথাকথিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার মূল্যকে নিয়ন্ত্রন করে। পর্যাপ্ত উৎপাদন, আমদানি ও যোগান থাকা সত্বেও পণ্য মজুদ করে রেখে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্থ করার মাধ্যমে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ৪০ লাখ টন আলুর চাহিদার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৮০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হচ্ছে অর্থাৎ দেশে পর্যাপ্ত পরিমান আলুর মজুদ রয়েছে। তবুও বাজারে আলুর দাম এখনও উর্ধমূখী।

ভোগ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি রোধের বিষয়ে অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ কিংবা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এ স্পষ্টভাবে কোন ধারা নেই বা কোনও ধারায় কিছু বলাও নেই বলে দাবি করে বক্তরা ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংস্কার, ধারা সংযোজন বা নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানান।