নাটোর লালপুরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন


লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:

নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের গৌরীপুরে ঐতিহ্য রক্ষায় বংশ পরম্পরায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে বিক্রি করে আসছেন কাঠ কয়লা ব্যবসায়ীরা। দেড়’শ বছরের বাপ-দাদার এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহাবুল। নানা প্রতিকূলতার সত্ত্বেও এই কাজকেই জীবন-জীবিকার অলম্বন করে বেঁচে থাকতে চান তারা।

সরেজমিন সোমবার (২০সেপ্টেম্বর) সকালে গৌরীপুুর পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গৌরীপুর-গোপালপুর সড়কের পাশে তৈরি হচ্ছে কাঠকয়লা। এক বিঘা জমিতে নির্মিত কারখানার পাঁচটি চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

কারখানা মালিক শাহাবুল ইসলাম (৩৫) বলেন, এক বিঘা জমি পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে তৈরি করেছেন ৫টি চুল্লি। প্রতিবছর জমির মালিককে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। শুকনো মৌসুমে বছরের ৬মাস কয়লা উৎপাদন করা যায়।

তিনি আরো বলেন, একটি চুল্লিতে ১৭০ মণ কাঠ পুড়িয়ে এক টন অর্থাৎ ৩৫ বস্তা কয়লা উৎপাদন হয়। ভাটায় ৫টি চুল্লিতে এক চালানে ৮৫০ মণ খড়ি পুড়িয়ে ১৭৫ বস্তা কয়লা পাওয়া যায়। এক চালান খড়ি পোড়াতে সময় লাগে ১০দিন-রাত। প্রতিমণ খড়ি সাধারণত ১১০ টাকা করে ক্রয় করেন। ইটভাটার মৌসুমে ১৫০টাকা মণ হিসাবে ক্রয় করতে হয়। প্রতি বস্তা কয়লা (২৫ কেজি) বিক্রি হয় ৬৫০ টাকা করে।

উজির সরদারের ছেলে মুকুল সরকার (৬১) বলেন, তাঁর বাপ-দাদারা দেড়’শ বছর আগে পার্শ্ববর্তী আরামবাড়িয়ায় এ ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচটি চুল্লি বানাতে ১০ দিন সময় লাগে। নিজেরাই চুল্লি তৈরির কারিগর। প্রতি চুল্লিতে ১৭০ মণ খড়ি সাঁজিয়ে আগুন দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনটি ফুকার দিয়ে চুল্লির আগুণের ধোঁয়া বের হয়। এভাবে ১০দিন অতিবাহিত হলে ধোঁয়া দেখে বোঝা যায় কয়লা প্রস্তুত হয়ে গেছে। মাসে ২ হাজার ৫৫০ মণ খড়ি লাগে। ছয় মাসে ১৫ হাজার ৩০০ মণ খড়ি পোড়ানো হয়।

আনার আলী (৪৫) বলেন, শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। এই কয়লা ঈশ্বরদী,পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। অটো রাইস মিল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, স্বর্ণকার, কামারশালা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ফার্মসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় এই কয়লা। সরকারি সহায়তা পেলে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে উন্নতি করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে গৌরীপুুর গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করায় ফলজ ও বনজ বৃক্ষ উজার হচ্ছে। যে কারণে জলবায়ু ও বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
২নং ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ঘটনাটি আমি জানি ও তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্সও দিয়েছি, যদি পরিবেশের ভারসাম্যের ক্ষতি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঠ কয়লা তৈরিতে ব্যবহৃত খড়ি সংগ্রহের কারণে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

লালপুর-বাগাতিপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার এ.বি.এম আব্দুল্লাহ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটি পরিবেশ অধিদপ্তরের বিষয়।

 

স/আ২