নাটোর-রাজশাহী সীমান্তে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীরা: কাড়ছে প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নাটোরের কলেজ শিক্ষক মোশাররফ হোসেনকে যেখানে ছিনতাইকারীরা গুলি করে তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কেড়ে নিয়ে গেছে, সেই এলাকাটিতে মাঝে-মধ্যেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে।

 

  • সম্প্রতি ওই এলাকাসহ আশেপাাশের বাগাতিপাড়া, বাঘার আড়ানি সীমান্ত এলাকা, এবং লালপুরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় দিনে-দুপুরে পিস্তল বা অস্ত্র ঠেকিয়ে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

 

বলা যায়, নাটোর লালপুর, বাগাতিপাড়া এবং রাজশাহীর বাঘা সীমান্ত এলাকাগুলোতেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। এদের টার্গেট দিনের বেলা একা পথ চলছে কারা, সেইসব মানুষকে টার্গেট করে মাঠে নামে ছিনতাইকারীরা। আবার রাতের বেলা তো রাজশাহী ও নাটোরের সীামন্ত এলাকা যে পুরো অরক্ষিত হয়ে পড়ে।

 

সন্ধ্যার আগ থেকেই ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে বসে থাকে কারা রাস্তায় বের হচ্ছে। যা পাচ্ছে তাই কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। এদের বাধা দিতে গেলে এখন মানুষকে জীবনও দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে ছিনতাইকারীদের হাতে এক কলেজ শিক্ষককে খুন হতে হয়েছে। তার মোটরসাইকেলটিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

গতকালকে দিয়ে সম্প্রতি তিনজন কলেজ শিক্ষকের মোটরাসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলো। যাঁদের মধ্যে একজনকে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণই দিতে হলো। কিন্তু এখনো অরাধ্য ছিনতাইকারীরা।

 

  • তাদের ধরতে পুলিশের তেমন কোনো অভিযান না থাকায় একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা।

 

গতকাল বৃহস্পদিবার দুপুরে লালপুরে পুলিশ বক্সের কাছে দিনে-দুপুরে ছিনতাইকারীর গুলিতে এক কলেজ শিক্ষক নিহত হয়েছেন। নিহত ওই কলেজ শিক্ষকের নাম মোশাররফ হোসেন (৪০)। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা সীমান্তবর্তি ও নাটোরের লালপুর সীমান্ত এলাকার বাদলিবাড়ি এলাকা নামক স্থানে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে অবস্থিত লালপুর পুলিশ বক্স।

 

  • নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার মোহরকয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। কলেজে ক্লাস শেষে মোশাররফ একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে ফেরার সময় ছিনতাইকারীদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লালপুরের মোহরকয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোশারফ হোসেন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে লালপুর-বাঘার সীমান্তবর্তী বাদলিবাড়ি নামক স্থানে এবং লালপুর পুলিশ বক্স থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে ছিনতাইকারীরা তাঁর গতিরোধ করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মোশারফ বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই শিক্ষক।

 

  • এরপর ছিনতাইকারীরা দ্রুত শিক্ষকের মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে এক ট্রাক চালকের সহায়তায় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে গুরুতর আহত কলেজ শিক্ষক মোশাররফ হোসেনকে উদ্ধার করে পাশবর্তি বাঘা থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে সেখানকার কতর্ব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

বাঘার বাউসা ইউনিয়নের চেয়রাম্যান ও নিহত কলেজ শিক্ষক মোশাররফ হোসেনের এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, নিহত কলেজ শিক্ষক একেবারে সাধা-সিধে মানুষ ছিলেন। তার কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিলো না। তাঁকে ছিনতাইকারীরাই গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়েছে।’

 
চেয়ারম্যান আরো বলেন, যেখানে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ওই এলাকায় মাঝে মাঝেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বাঘার সীমান্তবর্তি এবং প্রতিবেশী জেলা নাটোরের সীমান্তবর্তি উপজেলা লালপুর, বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন সীমান্ত স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।’

 

  • তিনি আরো বলেন, এর বাইরেও ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব খোয়াতে হয়েছে শতাধিক সাধারণ মানুষকে। কিন্তু পুলিশ এসব ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো ভ’মিকা গ্রহণ করতে পারেনি। যার কারণেই দিনের পর দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীরা।

 

লালপুরের বাদলিবাড়ি এলাকার জানে আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ছিনতাইকারীদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। রাতের বেলা এলাকার কোনো সড়কেই চলাচল করা যায় না। সড়কে বের হলেই থাকে ছিনতাইকারীদের আতঙ্ক। আবার দিনেও একা একা পথ চলা যায় না। একা পেলেই ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করবে। সঙ্গে যা আছে সব নিয়ে নিবে।

  • আমরা এ কোন দেশে বাস করছি? প্রশ্ন রেখে আনিসুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি দিনের বেলাতেও পথ চলতে পারেব না। রাস্তায় নেমে ছিনতাইকারীদের হাতে জীবন দিতে হবে-এটা কেমন কথা। এটা কি মগের মুল্লুক যে ছিনতাইকারীদের কারণে মানুষ জিম্মি হয়ে থাকবে দিনের পর দিন। তবুও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।’

 

নাটারের লালপুর থানার ওসি আবু ওবাইদা বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা আরো জোরদার তৎপরতা চালাবো। তবুও এদের মূলতপাটন করা হবে এবার। এদের ধরতের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।’

স/আর