নাটোরে স্কুলের জায়গা দখল করে যুবলীগের অফিস নির্মান

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
নাটোরের নলডাঙ্গায় স্কুলের জায়গা দখল করে সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিকদের দিয়ে স্থানীয় যুবলীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে উপজেলার কালিগঞ্জ উচ্চ বিদল্যায়ের জায়গা দখল করে এই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।

 

তবে সরকার দলীয় সমর্থক হওয়ায় প্রশাসনের কাছে কেউ অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছে না। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য উঠে আসে।

 
শনিবার দুপুরে সরেজমিন কালিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বদিকে কালিগঞ্জ সেতু সংলগ্ন প্রায় এক বিঘা জমির মাটি ভরাটের কাজ শুরু করছেন ৪৫ জন নারী শ্রমিক। তাঁরা সবাই সরকারের ১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিক।

উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁদের এই কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে কর্তব্যরত শ্রমিকরা জানান। তাঁদের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রিরাও রড সিমেন্টের খুঁটি তৈরীর কাজ করছিলেন। জায়গাটির উত্তর পাশে বারনই নদী, পূর্ব পাশে কালিগঞ্জ সেতু  ও দক্ষিণে বাজার।
কর্মরত শ্রমিক রোকেয়া বেগম জানান, তাঁরা সরকারের ১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিক। তাঁরা নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের নিয়োগ করা সর্দার আব্দুল হালিমের অধীনে কাজ করছেন। স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য ও যুবলীগের নেতারা তাঁদেরকে এখানে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, এখানে যুবলীগের অফিস নির্মাণ করা হবে। তাঁরা মাটি ভরাটের কাজ করছেন।

 
কাজের সর্দার আব্দুল হালিম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আখের আলী ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলয়ার হোসেনের নির্দেশে যুবলীগের ক্লাবঘর করার কাজ করছি। এ কাজের জন্য আমি সরকারি কর্মসৃজন কর্মসূচীর তহবিল থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা ও ৪৫ জন শ্রমিক ২০০ টাকা করে পাবেন।’ দলীয় অফিস করার কাজ তো তাঁরা করতে পারেন না বলা হলে তিনি বলেন,আমরা লেবার। মেম্বার চেয়ারম্যান আমাদের যেখানে কাজ করতে বলবে আমরা সেখানে করবো।

 
ঘটনাস্থলে অবস্থান করা কালে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুধন্য সরকার সেখানে আসেন। তিনি বলেন,আমরা সরকারি দল করি। আমাদের বসার একটা ঘর দরকার। তাই নদীর চরে দলীয় অফিস ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। পাঁচ শতাংশের ওপর আরসিসি পিলার দিয়ে ঘর নির্মাণের পাশপাশি আশপাশ দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় এমপি,চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী আমাদেরকে এখানে ঘর নির্মাণ করতে বলেছেন। সরকারি কোন অনুমোদন বা অনুদান নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘না নেওয়া হয়নি।’ আমরা চাঁদা তুলে ঘর করছি।

 
দলীয় কার্যালয় নির্মাণের মূল উদ্যোক্ততা দাবি করে ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.মোশাররফ জানান, তাঁরা আশে পাশের বিভিন্ন জমিতে অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের বাধার মুখে তাঁরা তা করতে পারেননি। অবশেষে এমপি সাহেব নদীর এই জায়গাতে ঘর করতে বলেছেন। তাছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী এখানে ঘর নির্মাণ করার লিখিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৩৬ জনের স্বাক্ষর করা একটা সাদা কাগজ দেখান। সেখানে ‘কালিগঞ্জ ক্লাবঘরের জায়গা’ লিখে উপস্থিত লোকজনের স্বাক্ষর হিসাবে ৩৬ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। কোন সিদ্ধান্ত লেখা নাই।

 
তিনি বলেন,এই জমি নিয়ে বিদ্যালয় ও রাধা গোবিন্দ বিগ্রহ কমিটির মধ্যে মামলা আছে। তবে আমরা মনে করি এটা নদীর খাস জমি। তাই এখানে ভবন করছি।’ কিন্তু নদী দখল করে দলীয় অফিস ভবন নির্মাণ করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নদীর তীর। এতে সমস্যা হবে না। স্থানীয় প্রশাসনের এ ব্যাপারে অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা অনুমোদন নেয়নি। তবে দলের নেতা কর্মীদের মত আছে। সরকারি শ্রমিক দিয়ে দলের কাজ করানোর ব্যাপারে তিনি বলেন,আমরাও তো সরকারি দলের লোক। মেম্বারেরা তাদেরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

 
স্থানীয় ইউপি সদস্য আখের আলীর (০১৭০৩৩৭৭৭৪৮) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সারাদিন তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 
পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, যুবলীগ নেতাদের অনুরোধে আমি শ্রমিকদের কাজ করতে পাঠায়েছিলাম। জায়গা নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও একটি বিগ্রহ কমিটির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তবে জায়গাটি নদীর খাস জমি বলে আমার ধারণা। এ ব্যাপারে আমি ইউএনওকে জানাতে পারিনি।

 
সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি দিয়ে কাজ করাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন করার পর পরই তিনি সেল ফোন কেটে দেন।

 
কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.এনামুল হক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, যুবলীগের অফিস যে জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সেটার হাল দাগ নম্বর ৯৮৪। এটা ১৯৭৪ সালে রাধা গোবিন্দ বিগ্রহ কমিটি বিদ্যালয়কে দলিল মূলে দান করে দিয়েছেন। পরবর্তী কমিটি এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি চলমান আছে। জমিটি বর্ষাকালে বারনই নদীর সাথে মিশে যায়। তবে শুস্ক মৌসুমে জমিটি আমাদের দখলে থাকে। আমাদের নিষেধ সত্বেও যুবলীগের ছেলেরা সকাল থেকে তাঁদের ক্লাবঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে আমরা থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

 
নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জাহান মুঠোফোনে জানান, ঘটনাটি তাঁর জানা নাই। তিনি বলেন, যদি যুবলীগের অফিস নির্মাণ করার কাজে কর্মসৃজন কর্মসূচীর শ্রমিকদের লাগানো হয় তাহলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

স/অ