নাটোরে নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ মদদে এলজিইডির কাজে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নাটোরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র দাসের প্রত্যক্ষ মদদে এ অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় ঠিকাদারদের মাঝে। ঠিকাদাররা বিষয়টি নিয়ে এলজিইডির বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করেছেন। এ নিয়ে কয়েক বার তদন্তও হয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধ হয়নি অনিয়ম।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, একজন ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে গত তিন বছরে নাটোরে প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে সরকার কন্সট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারের সঙ্গেই রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্রের আঁতাত। ফলে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিম্নমানের কাজও করে চলেছেন ওই ঠিকাদার। কিন্তু এ নিয়ে যেন মাথাব্যাথা নাই কারোরই। উপরন্ত একের পর এক কাজ দেওয়া হচ্ছে ওই ঠিকাদারকেই। আর কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠানটি নামের ওই ঠিকাদার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েক-জুনাইন সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ২ ইঞ্চি খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও একটিও নতুন খোয়া দেওয়া হয়নি। আগের পুরনো খোয়া দিয়েই কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরে নিম্নমাণের বিটুমিন দিয়ে কার্পেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই কাজটি পেয়েছিলেন আশিক নামের একজন ঠিকাদার। কিন্তু পরে সরকার কন্সট্রাকশনকে কাজটি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে এই কাজের ঠিকাদার আশিকুর রহমান বলেন, ‘কাজটি যেহেতু আমার নামে আছে কাজেই আমি করেছি। কে করেছে এখন সেটি আর বলার কোনো প্রয়োজন নাই। তবে কাজের কোনো মাণ খারাপ থাকলে আপনার সংবাদ প্রকাশ করে দেন।’

এই উপজেলার চান্দাইল-সাথইল সড়কের কাজেও ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে সরকার কন্সট্রাকশন নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এখানে সাববেজ ৬ ইঞ্চির স্থানে দেওয়া হয়েছে ৪ ইঞ্চি। ডাব্লুবিএম ৬ ইঞ্চির স্থলে ৪ ইঞ্চি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে নিম্নমাণের খোয়া।

স্থানীয় হযরত আলী নামের এক বাসিন্দা  বলেন, নিম্নমাণের কাজ নিয়ে আমরা দফায় দফায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উল্টো আমাদেরই ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ফলে পরে আর কেউ বাধা দিতে যায়নি।’
এদিকে লালপুরের রঘুনাথপুর সড়ক নিমার্ণেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানের খোয়ার সাববেজ ও ডাব্লুবিএমে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। দুটি কাজেই পরিমাণ মতো মালামাল দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি নিম্নমাণের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়েও স্থানীয়রা কয়েক বার অভিযোগ করেছেন উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরে। কিন্তু সেখানেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

স্থানীয় মুনসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাজের মাণ আমরা অতটা বুঝি না। কিন্তু যে ইট দেওয়া হচ্ছে, তাতে যে কেউ দেখলেও বলবে অনিয়ম হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু সেইভাবেই কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এখন শুধু কার্পেটিং করা বাকি।’

জানতে চাইলে এ কাজের তদারককারী উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৭৫ ভা কাজ ভালো হচ্ছে। বাকি ২৫ ভাগ একটু খারাপ হচ্ছে। তবে মোটামুটি ভালোই হচ্ছে বলা যায়।’

একইভাবে লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়াতেই রাস্তা নির্মাণের কাজ করছেন একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেখানেও কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরকার কন্সট্রাকশনের লোকজনের হুমকিতে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ নাটোর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্রের প্রত্যক্ষ মদদেই এভাবে একের পর এক নিম্নমাণের কাজ করছেন ওই ঠিকাদার নিম্নমাণের কাজ করে যাচ্ছেন। আবার অনিয়মের মাধ্যমেও কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই ঠিকাদারকে। সবমিলিয়ে একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গোটা জেলায় অন্তত ২০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে গত তিন বছরের মধ্যে।

ঠিকাদারদের দাবি, নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্রের সময়কালে নাটোরে এলজিইডির যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলেই প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে।

জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুজিত কুমার সরকার  বলেন, ‘আমার কয়েকটি কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি প্যাকেজে লালপুরে কয়েকটি কাজ চলছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে কোনো কাজেই অনিয়মের কোনো সুযোগ নাই।’

জানতে চাইলে নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র  বলেন, ‘ইজিপিতে কাউকে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার সুযোগ নাই। আবার কোনো কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে আমার জানা নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে আমার আলাদা সম্পর্ক নাই। অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অভিযোগ হলে তদন্ত করে দেখতে পারে কর্তৃপক্ষ।’

 

স/আর