নাটোরের নারদ দুষণ: প্রাণ এবং যমুনা ডিস্টিলারিজকে প্রশাসনের সর্তক

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
নাটোরের ঐতিহ্যবাহী নারদ নদ উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন জেলা প্রশাসন। আসন্ন ঈদুল ফিতরের পরেই শুরু হচ্ছে নারদ নদ দখল উচ্ছেদ অভিযান। এরই মধ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে ৩৭টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিন্ত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর নারদ নদ উদ্ধারে ঈদের পরেই শুরু হবে জড়ালো উচ্ছেদ অভিযান।

আর নারদ নদ উদ্ধার এবং সচল নিয়ে আন্দোলন করা সচেতন নাগরিক কমিটি ঈদের পরে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দিয়েছে। এদিকে, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শহরতলীর জংলি এলাকায় নারদ নদের আর্বজনা পরিস্কার উচ্ছেদ অভিযানের উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু সে অভিযান সফল হয়নি। কর্মসৃজন কর্মসূচি শ্রমিকদের দিয়ে পরিষ্কার অভিযান শুরু হলেও অজ্ঞাত কারনে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে নারদ নদ দুষনের মূল হোতা চারটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সাথে সর্তকের পরেও নারদ নদকে দূষিত করা হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন।

গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারদ নদের অবৈধ দখল উচ্ছেদ , দুষণ মুক্ত , নাব্যতা রক্ষা সহ নদের পানি প্রবাহ অব্যাহত বিষয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সভায় জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার, প্রাণ এগ্রো লিমিটিডের ডিজিএম হযরত আলী, টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটি নাটোর শাখার সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, নদী গবেষক যশোধন প্রামাণিক , বেলার রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়ক তন্ময় কুমার স্যার্ন্যাল, এনজিও এসাসিয়েশন নাটোরের সভাপতি শিবলী সাদী প্রমুখ।

জেলা প্রশাসকের কক্ষে ওই সভায় শাহিনা খাতুন বলেন, প্রাণ এগ্রো, যমুনা ডিস্টিলারি, কিষোয়ান এগ্রো এবং নাটোর সুগার মিল নারদ নদকে বছরের পর পর দুষন করে আসছে। নদে বিষাক্ত রাসিয়নিক মিশ্রিত পানি ফেলে নারদকে মেরে ফেলেছে। পাশাপাশি প্রভাবশালী অবৈধ দখলদার, অপরিকল্পিত ব্রীজ এবং রাস্তার কারনে নদ মরে গেছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে নারদকে সচল করতে বদ্ধ পরিকর জেলা প্রশাসন।
সভায় প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক হযরত আলী বলেন, প্রাণ তাদের বর্জ পরিশোধন করেই নদীতে ফেলছে।


কিন্তু জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন প্রাণের এমন বক্তব্যকে অসত্য দাবী করে বলেন, তিনি নিজে পরিদর্শন করে দেখেছেন যে প্রাণ এগ্রো তাদের ইটিপি সার্বক্ষনিক চালু রাখে না। যদি ইটিপি চালু থাকতো তাহলে এমন সমস্যা হতো না দাবি করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ”এই মুহুর্ত থেকে আর কোন বর্জ নারদ নদে না ফেলার জন্য নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, যে কোন মূল্যে নারদ নদে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি ঘোষণা করেন ঈদের পরে যে সমস্ত স্থানে মাটি ফেলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো অপসারন করা হবে। এছাড়া নারদ নদ পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার কাজে সকলের সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন , নদী রক্ষায় ঈদের পরে আরো একটি সভা আহবান করা হবে। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলের উপস্থিতিতে একটি সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার পাওয়ার প্রেজেন্টটেশনের মাধ্যমে নারদ নদে পানি প্রবাহে ৩৭ টি প্রতিবন্ধকতা সচিত্র ভাবে উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, নদী দখল করে স্থানীয় সরকার বিভাগ রিং কালাভার্ট , ব্রীজ এবং রাস্তা নির্মাণ করেছেন । যাতে করে নারদ নদের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া কোথাও কোথাও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নদ দখল করে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এসকল বাধা ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা গেলে নদে পানি প্রবাহ রাখা সম্ভব।

নারদ নদ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে সচেতন নাগরিক কমিটির ব্যানারে নাটোরের সাধারণ মানুষ। তারা নাটোরের লাইফ লাইন নারদ নদ অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদ খনন , চারঘাট স্লুইস গেট অপসারণ এবং নারদ নদে ভারী শিল্প কারখানার দুষিত বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন।

নাটোর জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন ,ঈদের পরে নারদ নদ সংস্কারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

স/অ