নাটোরেই কক্সবাজারের আমেজ!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মিনি কক্সবাজার খ্যাত নাটোরের হালতি বিলের পাটুল ঘাটে বিনোদন পিপাসুদের ঢল নেমেছে। ঈদুল আজহার ছুটিতে দুর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার মানুষ নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের টানে ছুটে আসছেন এখানে।

নাটোর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরত্বের এই বিল বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রের রুপ ধারন করে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে। এ সময় বিলের ভিতরের গ্রামগুলো দেখতে দ্বীপের  মত মনে হয়। ডুবন্ত সড়কে হেঁটে বেড়ানোসহ বিলের পানিতে সাঁতার কাটা ও নৌকা ভ্রমণ করে সময় কাটাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। তারা কক্সবাজারের আমেজ উপভোগ করছেন এখানে।

তবে দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে বিলগ্রামের মানুষদের যাতায়ায়াতের বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এরপরও তাদের এলাকায় বিপুল দর্শনার্থীদের আগমনে তারা খুশি।

অন্যদিকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাবসহ যাত্রী ছাউনির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের। হালতি বিলের এই এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করেছেন দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা।

বিশালায়তনের চলনবিলের একাংশ এই হালতি বিল। বর্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত এই বিল দেখতে আসে হাজার হাজার দর্শনার্থী। তাদের জন্য গত কয়েক বছর আগে পাটুল ঘাট থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ডুবন্ত সড়ক। বর্ষায় সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সড়কগুলো দিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল করে। এই ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকে ভ্রমনপিপাসুরা বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এই পাটুল ঘাট এলাকায় আসেন। এখানে এসে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন দর্শনার্থীরা। নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে স্থানীয়রাও প্রায় প্রতিদিন আসেন এখানে। তবে এবার বর্ষার শুরুতেই পানিতে ডুবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মৃত্যুতে স্থানীয় সুবিধাভোগীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর জেলা প্রশাসন হালতিবিলের নৌকা মাঝিদের মাঝে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করায় ভ্রমণকারীদের ভীতি কেটে গেছে।

বিলের দ্বীপগ্রাম খোলাবাড়িয়ায় মাকে সঙ্গে নিয়ে নানা বাড়ি বেড়াতে এসে বিপাকে পড়েন বগুড়ার মৌসুম খাতুন। তিনি জানান, বুধবার সকাল ১১টা থেকে পাটুল ঘাটে অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। কিন্ত দর্শনার্থীদের চাপে বিল পারাপারের জন্য নৌকা না পেয়ে ঘাটেই অপক্ষো করতে হয় কয়েক ঘণ্টা।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব, রেজা ও ইকবাল জানান, এখানকার নৈর্সগিক সৌর্ন্দয্যে কক্সবাজারের আমেজ অনুভব করছেন তারা। তবে এবার অনান্যবারের তুলনায় বিলভ্রমণে নৌকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

নৌকার মাঝি আবদুল লতিফ শাহ আলম বলেন, এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। দর্শনার্থীদের চেয়ে নৌকার সংখ্যাও কম। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নৌকা চালাতে হচ্ছে। যারা দিনভর সমগ্র বিল ঘুরছেন তাদের নিকট থেকে কিছু টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সমাজসেবক আকতার হোসেন বলেন, বিলের মধ্যে ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকেই এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানকার দিনমজুররা এখন বছরের অর্ধেক সময় চাষাবাদ এবং বাকি সময় নৌকা বেয়ে ভালোমতই জীবনযাপন করছে। অনেকেই বিল পাড়ে দোকান বসিয়ে বাড়তি আয় করছে।

জেলা পরিষদ সদস্য রইস উদ্দিন রুবেল বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় এই হালতি বিল এলাকায় অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, হালতি বিলের পাটুল ঘাট এলাকাকে পর্যটন সুবিধার আওতায় আনতে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।