মা হওয়ার নাটক করছিলেন শুভ্রা !

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজের সন্তান হবে প্রমান করতে নানা আয়োজন করেন শুভ্রা। দিনের পর দিন নানা কৌশলে অভিনয় করে। এই অভিনয়ে এলাকার মানুষতো দূরের কথা খোদ বাড়ির মানুষগুলোও ধরতে পারেনি। একজন মা সন্তান সম্ভবা হলে চলা-ফেলা যে ভাবে করতে হয় ঠিক সেই ভাবে চলা-ফেরা করতেন শাহিন আক্তার শুভ্রা।

তিনি প্রতিটি কদমে নিপুন ভাবে এগিয়ে চলেছিলেন। বাচ্চা হওয়ার আগে তার যত্নের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ছোট-ছোট কাঁথা সেলাই, জামা-কাপড় ইত্যাদি সব তৈরি করেন তিনি। এমনকি গত ১৯ বা ২০ তারিখে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে তার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে বলে জানান বাড়ির মানুষদের। অবশেষে এই নাটকের অবসান ঘটে গত শুক্রবার দুপুরে।

শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত শাহিন আকতার শুভ্রা গর্ভধারণের অভিনয় করেছিন এতো দিন। তিনি নবজাতকের বিষয়ে এতো দিন নাটক সাজিয়ে সাধারণের মাঝে প্রচার করেছেন। যাতে মানুষ মনে করবে এটা তারই সন্তান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসাপাতালের অনস্টপ ক্রাইসিসি সেন্টারের (ওসিসি) ইনচার্জ ডা. আনোয়ারা বেগম ওই নারীর গর্ভে এ সন্তান জন্ম নেয়নি বলে চিকিৎসক প্রতিবেদন দেয় তিনি।

বাড়ির মালিক আমিনুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে  জানিয়েছেলেন, শুভ্রার স্বামী ডাক্তার ও তিনি রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভর্সিটির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত। আর শুভ্রার ক্লাস কেজিতে পড়া অহনা নামের একটি মেয়ে রয়েছে।  সেই সুবাদে স্বামী আক্তারুজ্জামন বাঘায় থাকেন। আর স্ত্রী শুভ্রা টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকার এই বাড়িতে থাকতেন।

তিনি সিল্কসিটিনিউজকে আরো বলেছিলেন, শুভ্রা গর্ভবতি ছিলেন এটা এলাকার মোটামোটি সবাই জানে।  গত ১৯ বা ২০ তারিখে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে তার একটি ছেলে সন্তান হয় বলেও তিনি আমাদের জানান।এর আগে প্রস্তুতি হিসেবে ছোট-ছোট কাঁথা সেলাই,

জামা-কাপড় ইত্যাদি সব তৈরি করেন তিনি।

পুলিশ বলছে, ছেলে সন্তান না থাকায় গত মাস দুয়েক আগ থেকেই নবজাতক চুরির পরিকল্পনা করেছিলেন শুভ্রা। এরপর থেকেই তিনি পেটে কাপড় বেঁধে চ

লাফেরা করতেন।তাই স্থানীরা মনে করেন শুভ্রা গর্ভবতি। এছাড়াও ছেলে সন্তান চুরির টার্গেটে নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকেও ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তিনি। গ্রেফতারের পরও ওই সন্তান তার বলে দাবি করেন ওই নারী।

উদ্ধার হওয়ার দিন শুক্রবার নবজাতকের নানা মুক্তার হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।পরে তার নবজাতকের মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ছুটে আসেন আদরের সন্তানের কাছে। কিন্তু এসে তিনি দেখতে পেলেন না সন্তানকে। মুখে হাসি থাকলেও অসুস্থতা আর চিন্তার ছাপ ছিলো মায়ের মুখে। সেই অসুস্থতা আর চিন্তা থাকরেও কি হবে সন্তানের কথা শুনে সব কষ্ট যেনো নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে তার।

অনেক নাটকের পরে অবশেষে নবজাতকটি ফিরে পেলেন সেই মা মুক্তি খাতুন। শিশু

কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন তিনি। তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। এতো খুশি যে বলে বুঝাতে পারবো না। যেন নতুন করে এখন থেকে সব আবার শুরু করতে পারবো। এই কয়দিন ছেলে হারানোর শোকে কিভাবে পার করেছি বলতে পারবো না। আমার বুকের ধন আমি ফিরে পেয়েছি-এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।’

এদিকে, শুভ্রার কর্মস্থল নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির

জনসংযোগ দফতর পরিচালক এম এ কাইউম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শুভ্রাকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শাহিন আক্তার শুভ্রার ছোট বোন সুরভি বলেন, ‘আপার (শুভ্রা) একটি ছয় বছর বয়সের মেয়ে রয়েছে। অন্তঃসত্তা হওয়ার পর সে জানতে পরে দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে। এরপর সে গর্ভপাত ঘটায়। তবে গর্ভপাত ঘটানোর পর থেকে সে সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন ছিল।’

গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক জাহিদুল ইসলাম নবজাতকটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন।এছাড়াও নবজাতক চুরির দায়ে গ্রেপ্তারকৃত নারী শাহিন আক্তার শুভ্রাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে তার মা মুক্তি খাতুনের কোলে তুলে দেওয়া হয়। পরে শাহ মখদুম থানা পুলিশ মা মুক্তি খাতুনের নিকট থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে তার সন্তানটি তার কাছে তুলে দেন।

এর আগে শুভ্রাকে রামেক হাসাপাতালের ওসিসি নিয়ে গর্ভধারণের বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাকে সেখান থেকে আদালতে তোলা হয়। আজ রোববার তার রিমান্ড শুনানী হবার কথা। এ ঘটনায় গ্রেফতার শাহিন আকতার শুভ্রার সহায়তাকারী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা বেগমকেও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনিও জেলহাজতে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারী বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর নওদাপাড়া নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছেলে সন্তান প্রসব করেন নগরীর চর-শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তি খাতুন। এর প্রায় ছয় ঘণ্টার মাথায় চুরি হয়ে যায় তার সন্তান। ওই দিনই মুক্তি খাতুনের মা রোজিনা বেগমের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠকর্মী তোহুরা বেগম।

গত শুক্রবার দুপুরে নগরীর টিকাপাড়া বাসার রোডের ‘সপ্তর্ষি’ নামের ওই বাসায় অভিজান চালিয়ে নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে শাহিন আকতার শুভ্রাকে। এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে সনাক্ত করে পুলিশ।

 

স/আ