নাচোল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জনের স্থলে ৫ চিকিৎসক, ভাড়া ছাড়াই বসবাস কোয়ার্টারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হাসপাতালটিতে ১০ জনের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে কয়েকজন কর্মচারী দীর্ঘদিন এই হাসপাতালে থাকার সুবাদে তাদের দাপটে অস্থির হয়ে পড়েছেন অনেকেই। এদিকে হাসপাতালের কোয়ার্টারে ভাড়া ছাড়াই অনেকেই বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর জনবল কম থাকার কথা স্বীকার করলেও অন্যসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুলতানা পাপিয়া। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত হয় নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু অদ্যবধি এখানে চিকিৎসক ও জনবল বাড়েনি। এদিকে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা অফিস করেন জেলা সদর থেকে। এ সুযোগে হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরা ঠিকমতো রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

চিকিৎসাধীন অনেক রোগীই অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। যে খাবার দেয়া হয় তাও নিম্নমানের।

মহিলা ওয়ার্ডের ১২নং বেডে এক সপ্তাহ থেকে ভর্তি রয়েছেন নাচোল মধ্যপাড়ার ইসমাইলের স্ত্রী গাজলী বেগম। তার অভিযোগ, ঠিকমতো ওষুধপত্র ও ভালো মানের খাবার দেয়া হয়না। একই অভিযোগ গোমস্তাপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়ার ফাইজুদ্দিনের ছেলে আবু তাহের ও নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামের জমসেদ আলির ছেলে ইব্রাহিমেরও। তারা পুরুষ ওয়ার্ডের ২৫ ও ২৪ নং বেডে ভর্তি রয়েছেন। একদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে রোগীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে হাসপাতালে কয়েকজন নার্সের দাপটে অস্থির হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

জানা গেছে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সিনিয়র স্ট্যাফ নার্স হিসেবে চাকরি করছেন সুফিয়া খাতুন। তিনি এই হাসপাতালের একজন ক্ষমতাধর সিনিয়ির নার্স বলে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুফিয়া খাতুন সাময়িকভাবে ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে রদবদল হলেও ওই পদ তার জন্য স্থায়ী হয়ে গেছে। তার যোগসাজশেই রোগীদের বরাদ্দ ওষুধ পাচার হয়ে থাকে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে থাকলেও তার বদলি হয় না। নিকটাত্মীয় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে চাকরি করার সুবাদে তিনিও দাপটের সঙ্গে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে হাসপাতালের অনেকেই অভিযোগ করেছেন। হাসপাতালের আরেকজন দাপুটে সিনিয়র নার্স সায়েরা খাতুন মালা। যার নামে বাসায় প্রতিনিয়ত এমআর করানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনিও দীর্ঘ সময় ধরে এ হাসপাতালে চাকরি করছেন। তবে এর আগে তার বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তাকে সিলেট বিভাগে বদলি করা হয়। সেখানে কিছুদিন চাকরি করে আবারো নাচোল হাসপতালে ফিরে এসেছেন। ফিরেই পুরনো কর্ম শুরু করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

এজন্য নিজেকে তিনি অনেক সময় ‘ডাক্তার মালা’ বলেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আব্দুর রশিদ, নজরুল ইসলাম নজুসহ আরো অনেকেই যুগ যুগ ধরে এ হাসপাতালে চাকরি করছেন। কখনো বদলি হননি এরা।

হাসপাতালের অনিয়ম অনুসন্ধানে ভয়ঙ্কর একটি তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা হলো হাসপাতালের কোয়ার্টারে কয়েকজন ভাড়া ছাড়াই বসবাস করে আসছেন। এরা হলেন হাসপাতালের বাবুর্চি মর্জিনা খাতুন। যিনি ৩ মাস আগে এখানে যোগদান করেন। তার নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ না থাকলেও দিব্যি তা দখল করে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন। তবে স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তার নির্দেশেই কোয়ার্টারে আছেন বলে তিনি জানান।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অফিস সহায়ক জাকিয়া খাতুন এক বছর ধরে হাসপাতালের কোয়ার্টারে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন। ওই একই অফিসের অডিটর সম্পর্কে জাকিয়ার খালা তাহসিনা খাতুনও দুই বছর হাসপাতালের কোয়ার্টারে থেকেছেন ভাড়া না দিয়েই।

এসব অভিযোগ নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ এর সাথে রবিবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয় গুলির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তপুর্বক ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

স/অ