নাচোলে মুক্তিযোদ্ধার সমিতির নামে পুকুর ইজারা নেয়ার অভিযোগ


নাচোল প্রতিনিধি:  চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি সরকারি পুকুর মুক্তিযোদ্ধার সমিতির নাম ব্যবহার করে লীজ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার নেজামপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম এর ছেলে কবির হাসান(৫০) ও তার ছেলে বাবুল আক্তার বাবু(৩০), মৃত রেহেসান এর ছেলে আব্দুস সালাম(৩৫)। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান নয় বলে অভিযোগ করেছেন নেজামপুর স্টেশন পাড়া মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লি:এর সভাপতি মতিউর রহমান।

অভিযোগে জানাগেছে, উপজেলার নেজামপুর রেল স্টেশনের পাশে একটি সরকারি খাস পুকুর যার হাল দাগ নং ২৮৭,পরিমান ১.৫২। পুকুরটি নেজামপুর স্টেশন পাড়া মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লি:এর সদস্যরা ও পুকুর পাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো যুগযুগ ধরে পুকুরটি ভোগ দখল করে আসছে।

গত বাংলা ১৪২৬ সনে পুকুরটি উপজেলা প্রশাসন ইজারা তালিকায় দিলে পুকুর পাড়ে বসবাসরত পরিবারের পক্ষে ও সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান এক বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করেন। চলতি বছরে পুকুরটি পূণরায় ইজারা তালিকায় দেয়া হলে নেজামপুর স্টেশন পাড়া মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লি:এর পক্ষ থেকে দরপত্র দাখিল করেন মতিউর রহমান ।

গত ২১ সেপ্টেম্বর উপজেলা জলমহাল কমিটির মিটিং হলে ওই মিটিংগে পুকুরটি নাচোল মুক্তি যোদ্ধা সমবায় সমিতির নামে ৩ বছর মেয়াদে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে ১৫/২০ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি অচল থাকলেও উপজেলা সমবায় অফিসার সুনিল কুমার সরকার ৩২ বছরের বিলুপ্ত সমিতির কাগজে কলমে ৫,৬৮০ টাকার শেয়ার ও ১০,০৯০ টাকার সঞ্চয় দেখিয়ে সমিতিকে সচল দেখিয়ে প্রত্যন পত্র প্রদান করেছেন। সমিতির অফিস ঘর কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেনি তবে মুক্তি যোদ্ধা সমবায় সমিতির কথা শুনেই সমিতির প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেছেন বলে জানান তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মৃত ওয়ারেশ তুল্লা মন্ডলের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৫/২০ বছর ধরে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত ৪/৫ মাস পূর্বে আমাকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি, তবে মুক্তি যোদ্ধা সমিতির নামে পুকুর ইজারা নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানিনা বলে জাানিয়েছেন তিনি। সমিতির কার্যালয় কোথায় আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাচোল পৌর এলাকার জামতলা মহল্লার আব্দুল করিম বিশ্বাস এর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ন কবীর এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানামতে এই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই, নেই সাইনবোর্ড ও অফিসের কার্যক্রম,তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কেউ যদি ব্যাক্তি উদ্যোগে কোন সংগঠনের নাম দিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে খুলে থাকেন তবে তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে নেজামপুর স্টেশন পাড়া মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লি:এর সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, পুকুরটি আমরা পুকুর পাড় বাসী ও সমিতির সদস্যরা যুগযুগ ধরে ভোগ দখল করে আসছি। এবার পুকুরটি নেয়ার জন্য সমিতির মাধ্যমে দরপত্র দাখিল করেছি এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে আমরাই পুকুরটি পাবো কিন্ত উপজেলা জলমহাল কমিটি বে-আইনী ভাবে আমাদেরকে পুকুর ইজারা না দিয়ে ভূয়া উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা সমবায় সমিতির নামে ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পুকুরটি দখল করার জন্য কতিপয় ছেলে প্রতিদিন পুকুরের চার পাশে ঘোরা ফেরা করছেন। তিনি বলেন, এ-ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদ্বয়ের নিকট আপিল করেছি আশা করছি শিঘ্রই পুকুরটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিত্বে আমরা পাবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জল মহাল কমিটির সভাপতি সাবিহা সুলতানার নিকট যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জলমহাল কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা সমবায় সমিতির নামে ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আপিল হয়ে থাকলে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসিআর প্রদান করা হবে।

স/আ.মি