সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজন জঙ্গির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী এক সভায় ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় কিশোর-তরুণদের বিপথগামী হওয়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় দুই ছাত্রের জড়িত হওয়ার তথ্য প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে থাকা বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সভা থেকে নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ না করার আহ্বানও জানানো হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জঙ্গি সচেতনতা বিষয়ক এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই ছাত্র নিবরাজ ইসলাম ও আবীর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহতদের একজন সেজাদ রউফ অর্কও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন নর্থসাউথের উপ-উপাচার্য গিয়াসউদ্দিন আহসান। গ্রেপ্তারের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মতবিনিময় সভায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, জঙ্গিরা ধর্মের নামে কোমলমতি কিশোরদের কাছে টানে। প্রথমে ভালো কথা শোনালেও পরে ধীরে ধীরে জঙ্গি আদর্শের দিকে নিয়ে যায়। সমাজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
“তারা আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য গর্ত খুঁড়ে রেখেছে। সেই গর্ত থেকে মা-বাবারা তাদের সাবধানে রাখুন।”
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদে ঝুঁকে যাওয়া যুবকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি- তারা ক্লাসের শিক্ষক, প্রাইভেট শিক্ষক ও কোচিং সেন্টার থেকে জঙ্গিবাদী চিন্তার সংস্পর্শ পায়। ধীরে ধীরে তারা সন্ত্রাসবাদের ভয়ঙ্কর থাবায় ঢুকে পড়ে।
“জঙ্গিরা এসব ছেলেদেরকে চেনা পরিচিত সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ধীরে ধীরে জঙ্গি করে ফেলে।”
অভিভাবক ও শিক্ষকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আব্দুর রশিদ বলেন, বাগাড়ম্বর দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। সমস্যার মূলে হাত দিতে হবে। যারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য বাবা-মাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, “যেসব কিশোররা ধর্ম সম্পর্কে একেবারেই নিরক্ষর, যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৯ এর মধ্যে এবং যারা পারিবারিক অশান্তির মধ্যে থাকে তারা জঙ্গিদের সহজ টার্গেট।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটা বিপদের মধ্যেই আছি, আমার ভাষায় একটা যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
“অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের ওপর। জঙ্গি সন্ত্রাসীরা গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলা চালিয়েছে… আমাদের ওপর একটা অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই মনগড়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ইনু বলেন, বাংলাদেশের স্কুলে কলেজ, মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কয়েকটি ছেলের ভুলের জন্য সবাইকে দোষারোপ করা চলে না।
“নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসা বা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জঙ্গি উৎপাদন করছে এমনটি আমি মনে করি না,” বলেন তথ্যমন্ত্রী।
“আমি প্রশাসনকে বলেছি- নজর যদি দিতে হয়, তাহলে সকল সরকারি, বেসরকারি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় নজর দিন। যাতে একটি ছেলেও জঙ্গিবাদের ভ্রান্ত ধারণায় না জড়ায়।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তৌহিদ রেজা নূর বলেন, একাত্তর সালে যেই গোষ্ঠীটি রাজকার, আলবদর ও অন্যান্য নামে আমাদের দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, এখনকার জঙ্গিরা তাদের আদর্শের।
“ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করার মতো অশুভ চিন্তা যখন সমাজে দেখা দেয়, সেটা আমাদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।”
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুস সেলিম বলেন, “নর্থ-সাউথ কখনও জঙ্গিবাদের শিক্ষা দেয় না। দেশের ভেতরে নতুন করে জঙ্গিবাদী চিন্তা ঢুকেছে, যার প্রভাব পড়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
অনুষ্ঠানে সম্পাদক আবেদ খান, একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়ক কামাল পাশা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদও বক্তব্য রাখেন সভায়।
সূত্র: বিডি নিউজ