নব্য জেএমবি: এক জঙ্গি ২২ হামলায় জড়িত!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর আলোচনায় আসা নব্য জেএমবির সদস্য সংখ্যা কম হলেও তৎপরতা অনেক বেশি বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এই সংগঠনের মধ্যম সারির একজন সদস্য অন্তত ২২টি ঘটনায় জড়িত বলে জানতে পেরেছেন ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অনুসারী এই সংগঠনটির সাংগঠনিক কোনও কাঠামো নেই। তবু গত এক বছরে তারা উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশে প্রায় অর্ধশত হামলা চালিয়েছে।

 

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আলোচনায় আসে নব্য জেএমবি। যাদের মাস্টারমাইন্ড বা শীর্ষ নেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরীকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খোঁজা হচ্ছে নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক দুই নেতা মাওলানা আবুল কাশেম ও ডাক্তার নজরুলকেও।

 

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবির মেইন স্ট্রিমের সাংগঠনিক কাঠামো ছিল। পৃষ্ঠপোষকও ছিল। এর শীর্ষ নেতারা সবাই প্রায় কারারুদ্ধ বা মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনার সঙ্গে মেইন স্ট্রিম জেএমবি জড়িত থাকলেও বড় কোনও নাশকতা করার শক্তি তাদের নেই। কিন্তু নব্য জেএমবির সদস্য সংখ্যা কম। সাংগঠনিক কাঠামো নেই। কিন্তু তারা তৎপর বেশি।

 

মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য যেকোনও কিছুরই বাড়াবাড়ি থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় নব্য জেএমবি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাদের অনেক সদস্যই গ্রেফতার হয়েছে। কল্যাণপুরসহ অনেক অভিযানে তাদের সদস্যরা মারা পড়েছে। তাদেরও নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে।

 

 

জেএমবির মেইন স্ট্রিমের শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। মাঝে এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি রয়েছে। এমনকি শীর্ষ ৬ নেতার ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। ২০১০ সালে আমির হিসেবে কারাবন্দি মাওলানা সাইদুরকে অস্বীকার করে জেএমবির একটি ভগ্নাংশ আলাদাভাবে তৎপরতা শুরু করে। প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়ে গত বছর তারা অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে মাঠে নামে।

 

মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা যখন রিক্রুট হয়, তখন তাদের মগজধোলাই করতে গিয়ে বলা হয়, দেশের ৯০ ভাগ লোক তাদের এই কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা গেছে, যারা মারা গেছে, তাদের বাবা-মায়েরা পর্যন্ত ডেডবডি নিতে আসেনেনি। এটা তাদের জন্য একটা বড় মেসেজ। যারা বিপথে গেছে এবং যারা ভবিষ্যতে যাওয়ার চিন্তা করছিল এগুলো তাদের জন্য একটা মেসেজ।

 

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসা এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃত তথ্য হলো জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড দেশের ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ লোক সমর্থন করে না। সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদ ঘৃণা করে। জঙ্গিবাদকে রুখে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ কিন্তু মাঠে নেমেছে। এ কারণে নব্য জেএমবির সদস্যদের কাজ কারাটা বর্তমানেও কঠিন, ভবিষ্যতেও কঠিন হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি।

 

এক সদস্যই জড়িত ২২ ঘটনায়

নব্য জেএমবির এক সদস্যই একাধিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি)। এর মধ্যে একজন সদস্য একাই অন্তত ২২টি জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার সঙ্গেও জড়িত সে। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায়ও যাতায়াত ছিল তার। মাস্টারমাইন্ডদের একজন এই তরুণের প্রকৃত নাম জাহাঙ্গীর। তবে একাধিক সাংগঠনিক নাম রয়েছে তার। রাজীব বা সুভাষ বা গান্ধী নামেও নব্য জেএমবির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে চেনে।

 

ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দেখা গেছে, একজনের সম্পর্কে আমরা জানি—সে ২২টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। কোনোটিতে নিজে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কোনোটিতে অর্থ বা অস্ত্রের জোগান দিয়ে সহায়তা করেছে।

 

সিটির সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব ওরফে সুভাষ ওরফে গান্ধী ওরফে আদিল নামে এই তরুণ নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ধর্মালম্বী ও মতালম্বী, বিদেশি নাগরিক, উপাসনালয়গুলোয় হামলার সঙ্গে এই রাজীব জড়িত। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে সে বিভিন্ন স্লিপার সেলের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত হতো। সিটির কর্মকর্তারা জানান, এই রাজীবের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনও সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন